দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো :
লকডাউনের ফলে গত এক বছরে ভ্রমণপিপাসু যেকোনো মানুষের মন নিশ্চয়ই হাঁসফাঁস করে উঠছে কোথাও কিছুদিনের জন্য হলেও ঘুরে আসার জন্য। শুধু ভ্রমণপিপাসু কেন বাড়িতে থেকে দমবন্ধ পরিবেশের মধ্যে একটা গোটা বছর কাটানোর পর একটু হাওয়াবদলের ইচ্ছে কার না থাকতে পারে? তবে স্বাস্থ্যের দিকটাও তো খেয়াল রাখতে হবে, মানছি বাজারে টিকা এসে গেছে এবং আস্তে আস্তে সবার টিকাকরণ হলেও সাবধানতা অবলম্বন করলে ক্ষতি কি? তবে এসব শুনে মুখ ভারি করার কোন জায়গা নেই। কারণ আমাদের আশেপাশে এমন অনেক অজানা জায়গা আছে যেখানে সহজেই কিছুদিনের জন্য হলেও ঘুরে আসা যায়।


কথা হচ্ছে এমন এক জায়গায় যেখানে বর্ষাকালে গায়ে কম্বল দেওয়ার মত ব্যাপার হয়ে যায় বা ধরে নিন বরফের বৃষ্টিও দেখা যেতে পারে। এখন ভাবছেন এই পশ্চিমবঙ্গের আশেপাশে এমন কোন জায়গা আছে যেখানে দেখা যাবে? মানে এটা একটু বেশি বাজে কথা হয়ে গেল কিনা। আসলে কি বলুন তো প্রকৃতি বড়ই বিচিত্র, তাই প্রকৃতির গুণ ক্ষমতা সম্বন্ধে কোনো সন্দেহ রাখতে নেই। জায়গাটি হল পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িষ্যার কান্ধামাল জেলার একমাত্র শৈল শহর “দারিংবাড়ি” । এই শৈলশহর হওয়ার ফলেই এই জায়গাটাকে অনেকে আবার “ওড়িষ্যার কাশ্মীর” বলে ডাকে। সত্যি কথা বলতে আমাদের দেশে হিল স্টেশনের কোন অভাব নেই, আমাদের রাজ্যের মধ্যেই দার্জিলিংয়ের মত সুন্দর হিল স্টেশন আছে কিন্তু এই হিল স্টেশনের নিজস্ব এক সৌন্দর্য রয়েছে। শোনা যায় অনেক হিল স্টেশনের মত এই শহরটিও তৈরি সাহেবদের হাতে। দেশ যখন ইংরেজের কাছে পরাধীন তখন এই অঞ্চলের দায়িত্ব পেয়েছিলেন দারিং সাহেব। তিনি এই এলাকাতেই থাকতেন তারপরে তার নাম অনুসারেই এ জায়গার নাম হয়েছে দারিংবাড়ি। যদিওবা ওড়িয়া ভাষায় বাড়ি মানে ঘর বা পাকা বাড়ি নয়, এ কথার অর্থ “গ্রাম”। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে ঠাসা এই সত্য শহরটিতে যেতে হলে কলকাতা থেকে অনেক রকমের পথ রয়েছে। যেমন এখানে একাধারে করেছে পাইন গাছের জঙ্গল, কফির বাগান তেমনি আবার সুন্দর বন্যপ্রাণীরা অবাধে বিচরণ করে। রয়েছে মন মাতানো উপত্যকার সৌন্দর্য। তাই গরমকালে এই জায়গায় ঘুরে আসার থেকে ভালো জিনিস আর কিছুই হতে পারে না।


এবার কথা হলো যাবেনই বাকি করে দেখবেনই বা কি? তাহলে বলি, কলকাতা থেকে আনুমানিক ৬৮৪ কিলোমিটারের পথ অতিক্রম করলে পৌঁছানো যায় এই সুন্দর শৈল শহরে। যদিওবা কলকাতা থেকে সরাসরি কোন ট্রেন এখানে যায় না তবে আমব্রেলা থেকে ট্যাক্সি নিয়ে দারিংবাড়ি পৌঁছে যেতে পারে বা আকাশপথে কটক পৌঁছে কেসিঙ্গার জন্য বাস নিয়ে সেখান থেকে ট্যাক্সি করে যাওয়া যেতে পারে দারিংবাড়ি। আর গাড়ির রাস্তা সে তো খোলা আছেই। হাওড়া থেকে কোরাপুট এক্সপ্রেস ধরলে স্টেশনে পৌঁছানো যায়। চেন্নাই বা বিশাখাপত্তনম গামী ট্রেনে থেকে গাড়িতেই ঘণ্টা দুয়েকের রাস্তা এই শহর। সড়কপথে এই স্থানে যাতায়াতের সময়সীমা প্রায় ১৪ ঘণ্টার উপরে।


তবে একটা কথা জানিয়ে রাখা ভাল যেহেতু এই শৈল শহরটি উচ্চতায় অবস্থিত তাই যাদের শ্বাস প্রশ্বাসের অসুবিধা রয়েছে তারা এখানে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্ক থাকবেন কারণ কখনো কখনো শ্বাস-প্রশ্বাস একটু কষ্ট হয়। যাইহোক এবার দেখি এখানে দেখার মত কি কি আছে, প্রথমেই বলে রাখি এক দীর্ঘক্ষন ভ্রমণের পর প্রথম দিন সোজা গিয়ে হোটেলে উঠে খাওয়া-দাওয়া করে আশেপাশের কিছু জায়গা ঘুরে দেখা যেতে পারে কারণ শহরটি এতটাই মনমোহনকারি আর সুন্দর যে আপনার কোন ভাবে খারাপ লাগবে না। দ্বিতীয় দিন সকালবেলা আপনি বেরোতে পারেন লোকাল জায়গাগুলো ঘুরে দেখতে যার মধ্যে রয়েছে হিল ভিউ পয়েন্ট, এক সুন্দর নেচার পার্ক, দলুরি নদী, পাইন গাছের জঙ্গল এবং তার সাথে কফি বাগান। যারা সদ্য বিবাহ সেরেছেন অথচ লকডাউনের জন্য কোথাও যেতে পারেননি তাহলে তাদের জন্য বলি, এখানে অতীব সুন্দর জায়গা আছে যা “লাভার্স প্যারাডাইস” নামে পরিচিত। ভালোবাসার মানুষদের নাকি আদর্শ স্থান এই জায়গাটি। এছাড়াও দারিংবাড়ির সুন্দর মিরুবান্দা ঝর্ণার জলের ধারার আপনার মন কাড়তে বাধ্য। তৃতীয় দিন যদি আপনি মনে করেন তাহলে সকালবেলা উঠে এক মনোরম সূর্যোদয়ের দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন আপনি। তাছাড়া বলে রাখি এই সময় কিন্তু এখানকার তাপমাত্রা বেশ কম থাকে । তাই কোনভাবেই বৃষ্টি হলে বরফপাতের সম্ভাবনা কিন্তু একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সচরাচর লোকে দু-তিন দিনের জন্য এখানে ঘুরে আসতে চায় কারণ শহরের এই কোলাহল থেকে দূরে এই জায়গা আপনার মনকে শান্ত করে তোলে। তবে এই জায়গায় গেলেই আপনার মুঠোফোনটি মাঝে মাঝে অক্কা পেলেও পেতে পারে, কারণ ফোনে নেটওয়ার্কের কোন বালাই নেই এখানে। সুতরাং যদি কিছু দিনের জন্য কোথাও ঘুরে আসার মন করে থাকে তাহলে নিঃসন্দেহে ঘুরে আসতে পারেন এই জায়গাটিতে আর সারা বছর ঠান্ডা থাকার কারণে এখানে যেকোন সময়েই আপনি ঘুরতে যেতে পারেন। থাকার ও খাওয়ার ভালোই ব্যবস্থা আছে এখানে।