

“The Destination is Nothing The road is Everything…” যুগ যুগ ধরে ‘ভ্রমণ’ একটা নেশা।একটা স্বপ্নের বেড়াজাল। একটা দিন যাপনের অভ্যাস।আর স্বপ্ন কারিগরের আগ্রহ যদি বাড়তে বাড়তে পেশায় পরিণত হয় তাহলে তার মধ্যে সম্ভাবনাময় এক ধরনের সামাজিক রক্ষাকবচ থাকে। ট্যুরিজমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই ধরনের উদযোগ কখনই তেমন ভাবে সামাজিক পীড়াদায়ক হতে পারে না


শিকড়ের টান বলে তো একটা কথা আছে…বাঙালি ভ্রমণপ্রিয়। ভ্রমণের দুর্নিবার নেশা ধীরে ধীরে একের পর এক অপরূপ সৃষ্টি করেছে ভ্রমণ অধ্যায়ের বুকে। আমাদের এই অতীত হয়তো আমাদের আজও সিক্ত করে। এই তাড়না এবং সেই সঙ্গে সচেতন ভ্রমণপ্রিয় মানুষের ভ্রমণ খিদে ও আগ্রহ এই পেশার সাথে যুক্ত মানুষকে আরও শিক্ষিত,উপযুক্ত আর পরিকল্পিত করে তুলেছে। এটাই ছিল অলিখিত রীতি। কিন্তু এই রীতিতেই আজ উলোট পুরাণ। অনেকের কাছে ভ্রমণ আজ প্রেস্টিজ সিম্বল বা এক নাগরিক প্রতিযোগিতার অংশ,অথবা একটা ফুর্তির পসরা কিংবা এটা একটা বিজ্ঞাপন, বিনোদন, প্রমোদ। সব মিলিয়ে বিশ্বায়নী কায়দায় ভ্রমণ আজ to much বানিজ্যিক। আর এই বাণিজ্যিকতার ছোঁয়ায় লাদাখও আজ বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতার একটা পসরা মাত্র।
আপনাদের কোনো ভাবেই আঘাত না করেই বলছি, লাদাখে সৌন্দর্যর বিভিন্ন সুর রয়েছে … প্রত্যেকটা সৌন্দর্যই প্রত্যেকের থেকে নান্দনিক মূল্যের উৎকর্ষতা দাবি করে, উইন্টার লাদাখ নিয়ে আমাদের ভারতীয়দের আগ্রহ কম থাকলেও বিদেশীরা পালা করে সেই সৌন্দর্য রস আস্বাদন করে চলে যায়। আবার ধরুন মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে এপ্রিল অবধি যে ভিউ দেখা যায়,তা বলে বোঝানোর থেকেও অনেক বেশি অনুভব যোগ্য বলে মনে হয়। মোদ্দাকথা যে জন্য এত কথা বলছি, পুরো লাদাখ বা সম্পূর্ণ লাদাখ শব্দবন্ধন গুলো বড্ড গোলমেলে। নিদেন পক্ষে একমাসের ভ্রমণ কে যদি আপনি বা আমি ০৬-০৮ দিনের মধ্যে কমপ্লিট করতে চাই তাহলে যেটা হয় সেটা হল আবদ্ধ চোখ এবং সময় দিয়ে অনন্ত অসীম প্রকৃতির নান্দনিকতা কে গিলে খাওয়ার এক অসফল ব্যর্থ উদ্যোগ ও সেই সঙ্গে প্রতিযোগিতা।


অন্য ভাবে নেবেন না,দীর্ঘ কয়েকটা বছর ওখানে কাটিয়ে এটাই আমার ব্যক্তিগত উপলব্ধি। লাদাখ ঘুরে আসে কোনো ট্রাভেলারকে জিজ্ঞেস করবেন, প্যাংগং বা সোমোরিরি লেকের সৌন্দর্যটা ঠিক কি এবং কোথায় … সর্বোপরি লাদাখের নান্দনিকতা বা আকর্ষণটা ঠিক কি?… ৮০% এর উত্তরে আমি নিশ্চিত ভাব প্রদত্ত নিশ্চুপতা ,অপ্রাসঙ্গিকতার বাতাবরণ, অনুভবের উদাসীনতা, লোকাল গ্রামের মানুষজনের বিষয়ে আপেক্ষিকতার বিয়োগ এবং মৌখিক উচ্চারণ হীনতা, বৌদ্ধিজম ও বালতি সংস্কৃতির সাবলীলতায় বেড়ে ওঠা মিউজিয়াম গুলোর অদ্ভুত প্রসঙ্গ হীনতা, অন্ধ ঔদ্ধত্য ও আভিজাত্যের বাড়তি আস্ফালন …দৃপ্ত বচনে প্যাকেজ কস্ট আর ডিউরেশান ছাড়া আর কিছুই হয়তো খুঁজে পাবেন না। এভাবেই প্রতিদিন আমাদের ভ্রমণের লালা রস নিত্যদিনের আত্মকেন্দ্রিক ঔদ্ধত্যপূর্ণ ছুটে চলা নেশার অভিঘাতে নিশ্চুপ হয়ে পরছে।


সাধারণ ভ্রমণপ্রিয় নাগরিক আজ অনেকাংশেই ট্যুর এজেন্ট বা ট্যুর অপারেটর নির্ভর। শুধু তাই নয়, বাস্তব এটাই যে তাদের হাতের পুতুল মাত্র। বাণিজ্যিক স্বার্থে ও বাণিজ্যিক চোখে আজ উভয়পক্ষ ভ্রমণ খোঁজে। না চাইতে এই সংস্কৃতি আমরাই আমদানি করে ফেললাম … মুক্তির পথ এখন দুরহস্ত। বলাবাহুল্য ব্যতিক্রমও আছে, আজও অনেকের কাছে ভ্রমণ একটা সামাজিকীকরণের পথ … চিরায়ত নাগরিক জীবনের মুক্তির স্বাদ।


আমি ছোট থেকেই ছিলেম সোলো ট্রাভেলার । ধীরে ধীরে এই নেশাটাকে কিছুটা পেশা করে নিয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক ছোঁয়ায় যাকে বলে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি। বাকি সবটাই একই রয়ে গেছে। শুধু ধারাবাহিক ভাবে সোলো শব্দবন্ধ টা বাদ যেতে বসেছে। আজও আমি ট্রাভেলার … অনেকেই বলেন, আমরা নাকি তাদের স্বপ্ন বানাই… আবার অনেকের মতে আমরা নাকি ভাঙ্গা স্বপ্ন পূরণের কারিগর … ব্যক্তিগত ভাবে বলি- আমি বা আমরা যে ঠিক কি করি, সেটা আজও বুঝে ওঠা হয়নি। নোঙ্গর বিহীনভাবে সীমাহীন সমুদ্রে ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে শুধু ভেসে বেড়ানোর চেষ্টা করছি মাত্র। অনেক বছর তো হলো ডিঙ্গি নৌকা ছাড়তে পারলাম কৈ? আগ্রহ যেমন নেই বিশ্বাস করুন বানানো টাকাও নেই। সৎ উদ্দেশ্য ও সৎ চেষ্টার মাঝে মাঝে পিছনে ডাকে ও টানে। স্বপ্ন দেখা ও দেখানোতেই আমাদের সকলের শান্তি।


(তাই যেদিন খুশি সেদিন , সম্পূর্ণ অন্যরকম লাদাখ দেখতে হলে একজন ভ্রমণকারীর স্বপ্ন চোখে নিয়ে চলুন বেরিয়ে পড়ি অন্য লাদাখে পথে ।আপনার একটি ফোনেই আমরা সব ব্যবস্থা করে দেব । আপনার দেখা স্বপ্ন পূরণের সম্পূর্ণ অঙ্গীকার আমাদের । ফোন করে নিন এই নম্বরে +৯১৮৫৮৪০৭১৭৭০/+৯১৯৪৩২১১০৭১০ )।