দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: বুধবার হায়দ্রাবাদের সদর দপ্তর ভারত বায়োটেক ঘোষণা করেছে যে তারা মিসৌরির সেন্ট লুইসে অবস্থিত ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের সহযোগিতায় এক বিলিয়ন ডোজ ইন্ট্রানাসাল কোভিড-১৯ টীকা উৎপাদন করবে। এই চুক্তি টিকা বিতরণের সম্ভাব্য অসুবিধা দূর করতে সাহায্য করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যেমন টিকা প্রদানের উচ্চ খরচ অথবা প্রয়োজনীয় জনসংখ্যার ডোজ প্রদানের জন্য কর্মীর সম্ভাব্য ঘাটতি।
এই কোম্পানি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে একটি লাইসেন্সিং চুক্তি করেছে যাতে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং ইউরোপ ছাড়া “সব বাজারে” এই অভিনব শিম্পাঞ্জি-অ্যাডেনোভাইরাস প্রার্থীর জন্য নির্দেশিত ভ্যাকসিন বিলি করার মালিকানাধীন অধিকার লাভ করেছে।
যদিও প্রথম পর্যায়ে মানব পরীক্ষা সেন্ট লুইস বিশ্ববিদ্যালয়ের (এসএলইউ) চিকিৎসা মূল্যায়ন ইউনিটে অনুষ্ঠিত হবে, এছাড়াও মিসৌরির সেন্ট লুইসে, “প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রক অনুমোদন পাওয়ার পর” ভারত বায়োটেক ভারতে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের আরো পর্যায় চালু করবে। এছাড়াও হায়দ্রাবাদের জিনোম উপত্যকায় অবস্থিত এই কোম্পানী’র বড় মাপের টিকা উৎপাদন কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় টিকা প্রস্তুত করবে এই সংস্থা।
অ্যাডেনোভাইরাস টীকা মূলত: সেই টিকা যা একটি জেনেটিক্যালি পরিবর্তিত ভাইরাস ব্যবহার করে মানব শরীরের কোষের জন্য একটি কোড বহন করে যা SARS-COV-2 ভাইরাসের মতই স্পাইকি আউটার লেয়ার (স্পাইক প্রোটিন) উৎপাদন করে। আশা করা হচ্ছে এটি মানব শরীরকে এই স্পাইক প্রোটিনকে একটি বিদেশী (শরীরের বাইরের ) পদার্থ হিসেবে চিনতে সাহায্য করবে এবং এর বিরুদ্ধে একটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সাহায্য করবে যাতে এটি আসল (COVID-19) ভাইরাসের মোকাবেলা করতে পারবে যখন এটি শরীরকে সংক্রামিত করার চেষ্টা করবে।
উল্লেখ্য, ভারতে পরীক্ষা করা অন্যান্য অ্যাডেনোভাইরাস টীকা প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছে ‘কোভিশিল্ড’, যা অ্যাস্ট্রোজেনেকার সহযোগিতায় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা বিকশিত হয়েছে এবং আন্তর্জাতিকভাবে AZD1222 (তথাকথিত “অক্সফোর্ড টীকা) এবং গামালিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট দ্বারা বিকশিত স্পুটনিক ভি নামে পরিচিত। তবে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের টিকা ছাড়া এই উভয় টিকা’ই ইনজেকশনযোগ্য টীকা।
ভারত বায়োটেকের চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডঃ কৃষ্ণ এলা বলেন “আমরা ধারণা করছি যে আমরা এই টীকাকে এক বিলিয়ন ডোজে পরিণত করব, যা এক বিলিয়ন (১০ কোটি) ব্যক্তিকে টিকা দেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন যে, “একটি ইন্ট্রানাসাল (নাকের ভেতর দিয়ে নেওয়া) টীকা শুধুমাত্র পরিচালনা করা সহজ হবে না বরং চিকিৎসার অতিরিক্ত খরচ যেমন সূচ, সিরিঞ্জ ইত্যাদি ব্যবহার হ্রাস করা হবে, যা টিকা অভিযানের সামগ্রিক খরচের উপর উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাব ফেলবে।”
বায়োলজিক্যাল থেরাপিউটিক্স সেন্টারের পরিচালক এবং সেন্ট লুইসের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের রেডিয়েশন অঙ্কোলজির অধ্যাপক ড. ডেভিড টি কুরিয়েল বলেন “একটি একক নাকের ডোজ দিয়ে কার্যকর টিকা সম্পন্ন করার একটি প্রধান সুবিধা, এটি খুব স্বল্প সময়েই বৃহত্তর ভাবে পৌঁছানো যাবে এবং সহজ প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রদান করবে।”
তিনি আরও যোগ করেন যে “একটি কার্যকর নাকের স্প্রে ডোজ শুধুমাত্র COVID-19 থেকে রক্ষা করে না, একই সাথে এটি অন্য ধরণের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রদান করে যা প্রাথমিকভাবে নাক এবং গলার কোষে সংক্রমণ ঘটায়। যা বর্তমানে উন্নয়নের অধীনে থাকা অন্যান্য টীকাগুলি অপারগ।”
উল্লেখ্য, গত মাসেই চীনও এমন একটি ন্যাজাল স্প্রে করোনা টিকা’র পেটেন্টের জন্যে আবেদন জানিয়েছিল। এবার দেখা যাক ভারত বায়োটেকের এই টিকা কতটা ফলপ্রসূ হয় ভারতীয় নাগরিকদের ওপরে।