“জীবন তো ছেলেবেলা”-স্বরূপ চক্রবর্তী

0
34

চাকরিটা থমকে গিয়ে বিয়েটাই হল না। ফুলটুসকির জন্য, ফুলটুসকিকে পাওয়ার জন্য জীবন ছেলেবেলাই ছেড়ে দিয়েছিল। ফুলটুসকি পাশেই ওর মামার বাড়িতেই আসত। সেখানেই বন্ধুত্ব। তখন প্রেম ফ্রেম বোঝেনি জীবন। শুধু একটা অদ্ভুত টান বোধ করত ফুলটুসকি এলেই। শীতের ছুটিতে, ফাইনাল পরীক্ষার পর। আঃ কী যে ভাল লাগত। ডাঙগুলি, কাঁচগুলি, এক্কাদোক্কা, ডিজ্ঞেল, সাইকেলের রিঙয়ের  মাঝে শিক বেঁকিয়ে ধুলো ধুলো মাটির রাস্তা ধরে ছুট! আঃ! জীবন ধন্য হয়ে যেত। মহিমদের পাড়ায় ডাঙগুলি ম্যাচে অবিশ্বাস্য খেলেছিল ফুল। সবাই বলত, ধন্যি মেয়ে। তবে, স্কিপিঙয়ে ফুল, ফুল মার্কস পেত। আরে, কলকাতার মেয়ে বলে কথা। বার বয়সেই নিঃশব্দ সুন্দরী। জীবনের বাড়ি থেকেও রাজি, ফুলের বাড়িও না করেনি। দুটি বছরের বড় জীবন। তবে, এবার যখন ফুল এল, বেশ বদলে গিয়েছে। চুপচাপ। কথা কম। ছটফটানি হারিয়েছে। রূপে অন্য ঝিলিক। শুধু একবারই জীবনকে হেসে বলেছিল, ‘ওমা! তোমার গোঁফ আসছে গো জীবনদা।’ সে চাঁদ-লাজুক মুখে তীব্রতা কম, ভালবাসা বেশি বদলে যাওয়া জীবন-মুখে।

জীবনের মা ওদের সেদিন একক গল্পে ডাক দিলেন। ‘যা গল্প করতে থাক, ওই ঘরে, আমি জলখাবার নিয়ে আসছি।’ ফুল জীবনকে একা পেয়ে জাপটে ধরল। বলল, ‘ও জীবনদা তুমি আমায় বিয়ে করবে তো? ছাড়বে না তো?’ জীবন চুপ রইল। বলল, ‘দাঁড়া আগে কিছু কাজকর্ম করি, পড়াশুনোটা আরও ভালো করতে হবে, তবে তো চাকরি, তবে তো ওসব।’

পরদিন ফুল চলে গেল। এখন কম থাকে। আগে একমাস থাকত। এখন এক হপ্তা। পড়াশুনোর নাকী খুব চাপ। জীবন কাঁচা রাস্তা অবধি গিয়েছিল। ফিরে খানিক বসে রইল। আগামীবারে মাধ্যমিক। বড় জার থেকে কাঁচের গুলিগুলো বের করল, ডাঙগুলির ডাঙ আর দুটো পেয়ারা কাঠের গুলি, ডিজ্ঞেলটা পকেটে ভরল যখন, তখন মাঠে জমিয়ে খেলা হচ্ছে। গুলিগুলো পেয়ারা গাছের নীচে পুঁতে দিল, ডাঙগুলি নিয়ে চিলেকোঠার ঘরে চুপ করে লুকিয়ে ফেলল। ডিজ্ঞেলটা ছুড়ে দিল মাঝ পুকুরে, গোঁত খেয়ে পড়ল…। স্যাঁত শব্দে। ফুলের জন্য সব ত্যাগ! ছেলেবেলাও, এই অবেলায়!

ফুল এসেছে মা-ই খবর দিলেন, মামার মেয়ের বিয়েতে। জীবন চাষের কাজ সেরে ঘরের দাওয়ায় বসেছিল। ফুলের দুটি ছেলে আঠাশ আর ছাব্বিশ। মেয়েটি বাইশ। ফুলের মামার বাড়ি জীবন আর যেত না। যাবেও না। জীবন উঠে দাঁড়াল নিঃশব্দ চরণে। পেয়ারা গাছটা নেই। মাটি খুঁড়ল অনেকটাই। গুলি ভরা কাঁচের বোতলে ঝকঝক করে উঠল কাঁচের চুনি, মারদিস, পুলটিস, গোদা গুলিরা। ছেলেবেলা খুইয়ে…জীবন খুঁজছিল…। খুব খুঁজছিল।

শুকনো আছে, জ্যান্ত পেয়ারা গাছটা নেই।

ডাংগুলি/ডাং/রিং/স্কিপিং

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here