অন্নপূর্ণা যাত্রা

0
71

অভিজিৎ আঢ্য

শিয়ালদহ স্টেশনে দেখি ট্রেন নেই! মাত্র ১৫ মিনিট বাকি, অথচ… ট্রেন কই? এনকোয়ারিতে ছুট। চেকার টিকিটটা দেখতে চাইলেন, দেখে অনুসন্ধিৎসু ভদ্রলোক আমাকে বললেন, ট্রেন তো ছেড়ে দিয়েছে, তবে তা এন.জে.পি থেকে। আমার মাথায় তো হাত! টিকিটটা আমিই কেটেছিলাম তবে তা শিয়ালদহ থেকে এন.জে.পি র পরিবর্তে এন.জে.পি থেকে শিয়ালদহ কেটে বসে আছি। এতটুকু না ঘাবড়ে সকাল ৯.৩০ এর শিয়ালদহ- এন.জে.পি চেয়ারক্লাস এর দুটো সাধারণ টিকিট কেটে নিয়ে আমি আর হুলো চেপে বসলাম। বুবাই ছাড়তে এসেছিল, বেনু-মিলন-বুবাইয়ের যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু শেষ মুহূর্তে ওরা যেতে যেতে পারল না। আমি আর হুলো এক প্রকার নাছোড় হয়েই বেরিয়ে পড়েছি। ট্রেন ছাড়তেই কেমন যেন একটা উত্তেজনা। অনেকদিন থেকেই অন্নপূর্ণা টানছিল। অবশেষে পথ আমাদের গ্রন্থি বেঁধে দিল। ট্রেন ছাড়তেই লুচি আর আলুভাজা নিয়ে বসে পড়লাম। মুহূর্তেই খতম! তারপর জন্মভূমি এপিসোড মার্কা ঘুম। ট্রেন ছুটল আপন গতিতে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হল। সন্ধ্যা ৭.৩০ নাগাদ আমরা শিলিগুড়ি এসে পৌঁছলাম। পিঠে রুকস্যাক, কাঞ্চনজঙ্ঘা হোটেলে। ১০০ টাকা ভাড়া, মাছে ভাতে রাতের খাওয়া সেরে সটান ঘুম। সকালে উঠেই স্নান সেরে স্যাক গুছিয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। শিলিগুড়ি বাস স্ট্যান্ড থেকে বাস ধরে পানি ট্যাঙ্কি। সেখানে চেকপোস্টে ক্যামেরা এন্ট্রি করে নেপালের কাঁকড়াভিটা। নেপালে পৌঁছেই ঘড়ির কাঁটা ১৫ মিনিট এগিয়ে দিতে হল। তারপর ভারতীয় টাকা ভাঙিয়ে নেপালি টাকা বানালাম। ভারতীয় ১০০ টাকার বিনিময়ে নেপালি ১৬০ রুপিয়া। ১০,০০০ দিয়ে ১৬,০০০ পেলাম। কাঁকড়াভিটা থেকে পোখরা যাওয়ার বাসের টিকিট নিলাম। বাস ছাড়তে সন্ধ্যা পার। প্রায় ১৬ থেকে ১৮ ঘন্টার বাস জার্নি। কিন্তু, আমাদের বাস প্রায় ২৪ ঘন্টা লাগিয়ে দিল। এত দীর্ঘ বাস যাত্রা জীবনে করিনি। পোখরা আসতেই চোখ জুড়িয়ে গেল প্রাকৃতিক শোভা দেখে। চারিদিকে শুধু শ্বেতশুভ্র পর্বতমালা মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। একটা ছোট্ট সুন্দর স্বপ্নের মত শহর। মাথার উপর দিয়ে নেপাল এয়ারলাইন্সের প্লেনগুলো হুস হুস করে উড়ে যাচ্ছে মাঝে মাঝেই। পোখরার মূল আকর্ষণ ফেওয়া লেক। প্রায় চার কিলোমিটার লম্বা। কোথাও কোথাও ১ কিমি চওড়া। ফেওয়া লেক দুটিতে ভাগাভাগি। লেক সাইড আর ড্যাম সাইড। এই ড্যাম সাইডটাই সবচেয়ে দৃষ্টি নন্দন। এখান থেকেই দেখা যায় উত্তর দিকে জোড়া হিমালয়ের বরফে ঢাকা ভুবনমোহিনী রূপ আর ফেওয়া লেকে কাচ কাটা হিরের ছবি। বাঁ দিক থেকে ধৌলাগিরি, অন্নপূর্ণা সাউথ, অন্নপূর্ণা ১, মাচ্ছেপুছারে, অন্নপূর্ণা ৩, অন্নপূর্ণা ৪, অন্নপূর্ণা ২, লমজুং হিমল, মানাসুলু, হিউনচুলি, সবার আগে যে শৃঙ্গটি দৃষ্টি আকর্ষণ করে সেটি হল অজেয়শৃঙ্গ, মাচ্ছেপুছারে । পোখরার আর এক আকর্ষণ হল প্যারাগ্লাইডিং। এর স্বাদ না পেলে জীবনই বৃথা। আমরা ঠিক করেই ছিলাম একদিন পোখরাতে থেকে অন্নপূর্ণা যাত্রা শুরু করব। সেই মতো পোখরা শহরটা ঘুরে ফেললাম।

         ফেদি হয়ে অন্নপূর্ণা যাত্রা শুরু করব। ট্যাক্সিতে আধ ঘন্টায় ফেসি পৌঁছলাম। ফেদির উচ্চতা ৩৫০০ মিটার। লোকাল এক ধরণের মোটা চাউ দিয়ে ব্রেকফাস্ট করে পথ চলা শুরু হল। ঘন্টাখানেক চলার পরেই হঠাৎ বিপত্তি। আমার চোখ দুটো অন্ধকার হয়ে মাথাটা ঘুরে গেল। শুধু মনে আছে মাথাটা চক্কর দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রুকস্যাকটা পিঠ থেকে নামিয়ে দিয়েছিলাম। মিনিট দশেক পর সম্বিত ফিরে পেলাম। আমাকে সুস্থ হতে দেখে হুলো একটু বল পেল। যাত্রার শুরুতেই এমন বিপত্তি হতে পারে তা আমারা দুজনে ভাবতে পারিনি। কিন্তু, মিনিট দশেকের মধ্যেই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলাম। আমরা দুজনে মিলেই আবিষ্কার করলাম বিপত্তির জনক ‘দেশি চাউ’, আর প্রচুর পরিমাণে খাওয়া। হাঁটা শুরু হল ফের। আজকের গন্তব্য তোলকা। ডিসিশন, থামা নেই। ছয় থেকে সাড়ে ছয় ঘণ্টার হাঁটা পথ। শুরু থেকেই চড়াই ভাঙা। সিঁড়ি ভাঙা বলাই ভাল। বড় বড় গাছ গাছালি আর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে প্রকৃতির সিঁড়ি উঠে গেছে। পথ চলতে বেশ কষ্ট। কিছুক্ষণের মধ্যেই সিঁড়ি ভাঙা শেষ করে চড়াই পথে হাঁটা শুরু হল। দুই পাশের ঘন জঙ্গল  ক্রমেই কমে আসছে।  সোনালি রং ধরা ধানের খেত আর মাঝে মধ্যে দু একটা ঘর বাড়ি, প্রায় দু ঘণ্টা চলার পর আমরা ধম্পুস থামলাম। ধম্পুস বেশ বড় গ্রাম। এখানে বেশ কয়েকটা লজ আছে। এখানে দুপুরের খাওয়া শেষ করে আবার পথ চলা শুরু করলাম। রাস্তা খুব কঠিন নয়। কিন্তু  হঠাৎ বৃষ্টি নামল। আর দেউরালি পৌঁছে বেশ খানিকক্ষণ দাঁড়াতেই হল। বৃষ্টিতে চলার  পথ কঠিনতর । তোলকা এসে পৌংছতেই সন্ধ্যা হাজির। হুলো টেন্ট লাগানোর ব্যবস্থায়। আমিও হাত লাগালাম। রাতের বিছানা তৈরি করেই সামনের একটা হোটেল থেকে ডাল-ভাত ৩০০ টাকায় (!) খেয়ে তাড়াতাড়াই শুয়ে পড়লাম।

         হুলোর ডাকাডাকি ভোরেই শুরু। আজকে ছমরঙের চড়াই ভেঙে যেতে হবে। তাই সকাল ৬ টাতেই স্যাক পত্তর গুছিয়ে নিয়ে পথ চলা চালু। ঘণ্টাখানেক চলার পরই আমরা লানড্রুক থামলাম। ছাতুর সরবত দিয়ে ব্রেক ফাস্ট। এবার উৎরাই পথে নামা শুরু হল। নীচে বয়ে চলা মোদি খোলা নদী সরু সুতোর মতো বয়ে চলেছে।  মোদি খোলার ধার দিয়ে হেঁটে চলেছি। এখন মোদি খোলার রূপ বেশ ভয়ঙ্কর। প্রায় ঘন্টাখানেক হেঁটে আমরা নিউ ব্রিজ এসে পৌঁছলাম। টুকরো রেস্ট। আবার চলা শুরু  হল। ছোট বড় ঝোপ ঝাড় পেরিয়ে এগিয়ে  চললাম। মাঝে মাঝেই মেঘের আড়াল থেকে হিমালয়ের শুভ্রতার চমক। মেঘের সঙ্গে বরফে মোড়া গঙ্গাপূর্ণার লুকোচুরি খেলা চলেছে। চোখ জুড়ানো সোনালি শস্য খেতে ভরা একটা পাহাড়ি ঢাল পেরিয়ে আরও কিছুক্ষণ পরে আমরা ঝিনুডান্ডায় চলে এলাম।

         ঝিনুডান্ডা পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু ছমরঙ-এর চড়াই শুরু হতেই যেন সবকিছু ওলট পালট হয়ে গেল। রাস্তা একেবারে গগনচুম্বি। আমাদের দুজনের মুখে কোনও কথা নেই। পথ যেন আর শেষ হয় না। মাঝে মাঝেই পায়ের নীচে থেকে ঝুরো মাটি ঝুরঝুর করে পড়ে যাচ্ছে। তবুও থামা নেই। পটার গাইড ছাড়া আমরা যে রুকস্যাক বয়ে নিয়ে চলেছি তা ওখানকার মাল বাহকরা এক-আধবার চাগিয়ে দেখে চোখ কপালে তুলছে। কি নেই! তাতে ছুঁচ সুতো থেকে শুরু করে টেন্ট, চিঁড়ে-মুড়ি, চাল-ডাল থেকে এবং ছোট স্টোভ সবই আছে। আমরা একপ্রকার বুকে হেঁটে ধাউল টগলুং হয়ে বিকেল পাঁচটা নাগাদ আমরা ছমরং গিয়ে পৌঁছলাম। ছমরং পৌঁছে উদ্যম যেন নতুন করে ফিরে এল। একটা ফাঁকা জায়গায় টেন্ট খাটিয়ে  হুলো খিচুড়ি বানিয়ে ফেলল। একাই খেয়ে, দে ঘুম! বাকি রইল অচ্ছুৎ।

         রাত যে কখন শেষ হয়েছে বুঝতেই পারিনি। হুলো তাড়া লাগাতে লাগল। আজ একটু তাড়াতাড়ি বেরতে হবে। আগেই ঠিক করে রেখে ছিলাম যে আজই আমরা দেউরালি পৌঁছে যাব। সাধারণত সবাই হিমালয় (জায়গাটার নামই হিমালয়) পর্যন্তই যায়। কিন্ত আমরা প্রায় দ্বিগুণ পথ অতিক্রান্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা দুজনে দু’টো করে লাঠি জোগাড় করেছি আর তাতে ভর করেই আমরা পাহাড়ি পথে ছুটে চলেছি। চারপাশে রডোডেনড্রনের ঘন জঙ্গল। এত ঘন, যে আলো খুবই কম। এক সময় আমরা নেমে এলাম ছমরং-এর খোলা ব্রিজের ধারে। আবার চড়াই পথ ভেঙে উঠে এলাম সিনুডান্ডায়। রাস্তা আবার ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে । বড় বড় পাথর ডিঙিয়ে

চেক পোস্টে চলে এলাম । চেক পোস্ট অতিক্রম করলেই অন্নপূর্ণা স্যাংচুয়ারি শুরু। এখানে নাম ঠিকানা এন্ট্রি করা বাধ্যতামূলক। যদিও ভারতীয়দের কোনও এন্ট্রি ফি লাগেনা। ঘন বাঁশের জঙ্গল পেরিয়ে আমরা যখন বাম্বু এলাম তখন বেলা প্রায় এগারোটা। এখানে দুপুরের লাঞ্চ সেরে বারোটা নাগাদ আবার চলা শুরু হল। ধোবান পৌঁছতে আরও দেড় ঘণ্টা  লাগল। আমাদের চলার গতি ক্রমশ শ্লথ হতে লাগল। বিকেল যখন তিনটে আমরা হিমালয়ের কোলে এসে পৌঁছলাম। আমার শরীর যেন আর চলছে না। কিন্তু হুলো নাছোড়বান্দা, আজ দেউরালি পৌঁছে তবেই থামবে। অগ্যতা কোলে একটু বিশ্রাম নিয়ে আমরা দেউরালির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। পাঁচটা বাজতেই অন্ধকার নেমে এল। চারিদিকে কিছুই দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। চারিদিকে নিস্তব্ধতা ছেয়ে আছে। শুধু আমাদের চলার শব্দ। আমরা টর্চের আলোয় এগিয়ে চলেছি। হুলো এতক্ষণে বুঝতে পেরেছে যে ওর সিদ্ধান্তটা ভুল। পাহাড়ে এসে গোঁয়ারতুমি করতে নেই। আমরাও নিরুপায়। পিছিয়ে যাওয়ার কোনও উপায় নেই। তাই এগিয়ে চললাম। আমি ঘন ঘন ঘড়ি দেখতে লাগলাম। ঘড়ির কাঁটাতে সাড়ে আটটা বেজে গিয়েছে। আমরা দুজনেই বুঝে উঠতে পারছি না কি করব! শুধু গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে চলেছি। হঠাৎ একটা বাঁক ঘুরতেই আলোর দেখা ! আমরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। দেউরালি পৌঁছলাম তখন রাত প্রায় ন’টা। সাংগ্রিলা গেষ্ট হাউসে আমাদের দেখেই অবাক। এত রাতে সাধারণত কেউ আসে না। কোনওরকমে খেয়ে ঘুম।

         বেশ বেলা করেই উঠলাম। আজ আমরা একটু বেলা করেই বের হব ঠিক করেছিলাম। প্রায় ১০ টায় হাঁটা শুরু হল। আজ মচ্ছেপুচ্ছারে বেসক্যাম্প হয়ে অন্নপূর্ণা যাব। ছোট ছোট গাছ গাছালির মধ্যে দিয়ে চড়াই ভেঙে এগিয়ে চলেছি। যতই উপরের দিকে উঠছি গাছপালা ক্রমশ কমে আসছে। সমনেই বরফমোড়া হিমালয়ের আভাস। আজ আমরা হেলতে দুলতে পথ চলেছি। প্রায় দুটোর সময় আমরা মচ্ছেপুচ্ছারে বেসক্যাম্প এসে পৌঁছলাম। মচ্ছেপুচ্ছারেকে দেখে বিস্মিত হয়ে গেলাম। এত খাড়াই শৃঙ্গের শীর্ষে কিছুটা অংশ সবসময় বরফ মুক্ত থাকে। এতটাই খাড়াই যে বরফ জমতে পারে না। এই কারণে মচ্ছেপুচ্ছারে শৃঙ্গ আজও অজেয় রয়ে গেছে। তীক্ষ্ণ, তীব্র ত্রিশূলের ফলার মতো। মচ্ছেপুচ্ছারে বেসক্যাম্প ছেড়ে আমরা অন্নপূর্ণা বেসক্যাম্পের দিকে এগিয়ে চলেছি। আকাশ বেশ মেঘলা। বৃষ্টি নামতে পারে যে কোনও মুহুর্তে। তাই আমরা বেশ জোরে জোরে এগিয়ে চলেছি। এর মধ্যে ঝির ঝির করে তুষারপাত শুরু হয়েছে। আমরা চলার গতি আরও বাড়িয়ে দিয়েছি। কারণ, আমরা কোনও গাইড নিইনি। বরফে পথ ঢেকে গেলে আমরা পথ হারিয়ে বিপদে পড়তে পারি। বিকাল যখন প্রায় চারটে, কতকগুলো ট্রেকার্স হাট আমাদের চোখে পড়ল। আমরা দুজনে প্রায় ছুটে অন্নপূর্না বেসক্যাম্পে গিয়ে উঠলাম। আনন্দে দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরলাম।

         আজ কোজাগরী লক্ষী পূজা। মেঘ সরে চাঁদমামা আকাশে তার পূর্ণ রুপ নিয়ে হাজির। দুজনেই হতবাক হয়ে গিয়েছি চারিদেকে শুধু শ্বেত শুভ্র তুষার শৃঙ্গ আমাদের ঘিরে আছে। আমরা ঠিক তার মাঝখানে। বিষ্ময়ে প্রকাশের ভাষা হারিয়ে আমরা নির্বাক দর্শক। শুধুই দেখছি আর মুগ্ধ হচ্ছি পূর্ণিমার চাঁদ জ্যোস্না দিয়ে বরফে পাহাড়ে মাখামাখি করে দিচ্ছে। দুজনের চোখেই ঘুম নেই। এই রাত্রির একটা মুহূর্তও আমরা মিস করতে চাই না। ভোর হওয়ার আগে থেকেই আমরা ক্যামেরা রেডি করে বসে আছি। সূয্যিমামা একটু একটু করে তুষার রাজ্যে আলো বিস্তার করেছে। হঠৎ   অন্নপূর্ণা সাউথ শৃঙ্গের মাথা জ্বলে উঠল, তারপর হিউনচূল্লি। আমরা মন্ত্র মুগ্ধের মত তাকিয়ে আছি। যেন তুষার শৃঙ্গের মাথায় আগুন ধরেছে ! আমাদের বিষ্ময় যেন কিছুতেই কাটছে না। দুপুরের সূর্য আমাদের মাথার উপর। প্রতিটি তুষার শৃঙ্গ যেন তীব্র আলোয় জ্বলছে ! তাদের দিকে খালি চোখে তাকায় কার সাধ্য ! সূয্যিমামা সাউথ অন্নপূর্ণার আড়ালে যেতেই শুরু হল মচ্ছেপুচ্ছারের রং বদলের খেলা। প্রথমে সোনালি, তারপর আগুন, তারপর লালচে গোলাপি এই তিন রঙেই রূপ। অন্ধকার নামতেই প্রচন্ড ঠান্ডা জাঁকিয়ে বসল। আমরা স্বপ্ন পূরণের ঘুম ঘুমতে গেলাম।

         সকাল হতেই আমরা বেরিয়ে পড়লাম। আবার আমদের ফিরে যেতে হবে। বার বার শুধু মনে হচ্ছিল জীবনটা কেন এমন একটা কোজাগরী পূর্ণিমার জ্যোস্নাস্নাত অন্নপূর্ণা বেসক্যাম্পের রাত্রি হল না। এই পূর্ণতা পান করার পর পৃথিবীর সকল সুখ অতি তুচ্ছ মনে হচ্ছিল। ফিরে আসার সময় বার বার পিছনে ফিরে তাকাতে তাকাতে মনে হচ্ছিল জীবনে এসব পাওয়ার অনুভূতি গুলো গল্প করার নয়-ভাষায় প্রকাশ করার নয়, শুধুই অনুভব করার। যে অনুভূতির রাশ থাকে জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত…।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here