শ্মশান ঘাটের উপকথা

0
111

ডাঃ অনিন্দ্য দাস

পাহাড় পর্বত সমুদ্র ঘোরার পাশাপাশি একদম ঘরের কাছে কয়েকঘণ্টায় ঘুরে আসার পরিকল্পনা আমি মাঝেমধ্যেই করি। আজও ভোর বেলা বেরিয়ে পড়লাম গাড়ির স্টিয়ারিং হাতে। না বেশী দূর নয়, পরিচিত বিখ্যাত কোনো জায়গা নয়। ধুলাগর টোলপ্লাজা পেরিয়ে 8km পর ডান দিকে হঠাৎই বাক নিলাম। উদ্দেশ্যবিহীন ভ্রমন, তাই দিকনির্দেশিকা দেখে বুঝলাম রাস্তাটা যাচ্ছে আমতা। আমতা গিয়ে বা দিকে উদয়নারায়ণপুর এর রাস্তায় ঢুকলাম। একটা অপরিচিত নদীর ব্রিজে দাঁড়িয়ে বেশ ভালো লেগে গেলো। লোক মুখে জানলাম এটা দামোদর। চললাম নদীর তীর অভিমুখে। জায়গাটার নাম তাজপুর! না দিঘা তাজপুর নয়, এ কোনো অখ্যাত নদীবাঁধের উপরের জনবসতি। পথে একটা মন্দির দৃস্টি আকর্ষণ করতে গাড়ি রেখে নেমে পড়লাম। কিন্তু গাছমছমে ব্যাপার, এটা তো শ্মশান। তো কি! নির্মল প্রকৃতি যেনো কাছে টানে। নদীর ওপারে সেই মন্দিরে পৌঁছাতে একটা বাঁশের সাঁকো আছে। একটি ছেলে সাঁকো পার হবার ভাড়া বাবদ 10টাকা চাইলো। কিন্তু 10টাকার বিনিময়ে নদীর অন্য পাড়ে জনবিরল প্রান্তর যেনো সৌন্দর্যের পসরা সাজিয়ে অপেক্ষমান। মন্দির প্রাঙ্গনে বসে দেখতে কাঠঠোকরার ঠোকর ঠাঁই শুনে যেই ক্যামেরা রেডি করছি, সে লাজুক পাখি আমাকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে গেলো। ভগ্নমনোরথ আমি ফিরবার উপক্রম করছি, তখন চোখ আটকে গেলো বাঁশবাগানের মধ্যে সরু পথে। বাঁশবাগানের মধ্যে দিয়ে সরু অন্ধকার পথে শুধু পাখির কলকাকলি। একটু এগোতে ছাতারে পাখি, হুতোম পেঁচা র দল উড়ে চলেছে। কিন্তু আমার দৃষ্টি আটকে সেই কাঠঠোকরার দিকে। কিছু সময় ফটো তুলে এগোলাম সেই পথে, পথের শেষে ছোট্ট মাঠে গিরগিটির আনাগোনা আর মুহুর্মুহু বর্ণ পরিবর্তন সভ্য সমাজের কথা মনে পড়িয়ে দিলো। তাই খিদের টানে ফিরতে হলো কারন আমি তো সেই বর্ণচোরাদের ই প্রতিনিধি। কিন্তু এই নির্মল সবুজ প্রকৃতির টানেই তো বার বার বেরিয়ে পড়ি। হয়তো এখানে তাজমহল নেই সপ্তম আশ্চর্য নেই, কিন্তু যা আমি চাই তা খুঁজে পাই।

এরকম নৈসর্গিক সৌন্দর্যই গ্রামবাংলার সম্পদ, এই সৌন্দর্যে বাংলা চিরন্তনী ও অকৃপণ। কিন্তু আমাদের মতো অদূরদর্শী, স্বার্থান্বেষী ও বর্ণচোরাদের সংকীর্ণ কর্মকাণ্ডে এটাই তো আজ অবলুপ্তির পথে। আমরা প্রকৃতিপ্রেমী আবার শিল্পবিপ্লবের ধ্বজাধারী, আমরা বন চাই আবার বন কেটে বসত বানাই। তাই ই তো এই সবুজের খোঁজে সপ্তাহান্তে মরিয়া প্রয়াস চালাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here