সাহিলের স্কলারশিপের টাকায় এখন সাংসার চালাচ্ছেন অসহায় বাবা-‌মা

0
83

নির্মলকুমার সাহা

বাপি লস্কর রঙের মিস্ত্রি। গ্রামের এখানে-‌ওখানে ঘুরে ছোটখাটো ঘর-‌দোকান রঙ করার কাজ করতেন। রোজ অবশ্য কাজ পেতেন না। সেদিন কোনও আয়ও হত না। বাপির স্ত্রী সাবেরা গ্রামেই ঘুরেঘুরে ছোটদের জামা-‌প্যান্ট বিক্রি করতেন। সেই আয়ও ছিল অনিশ্চিত। করোনার জেরে এখন তাও বন্ধ। ওঁদের ছেলে সাহিল লস্কর ভারতের সম্ভাবনাময় সাঁতারুদের একজন। ১৫ বছরের সাহিল এরই মধ্যে বিভিন্ন বয়সভিত্তিক সাঁতারে জাতীয় পর্যায়ে নজরকাড়া সাফল্য পেয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে সাহিলের গলায় উঠেছে এশিয়ান এজ গ্রুপ সাঁতারের ৪ টি পদকও। দুটি ব্যক্তিগত রুপো। ৫০ ও ১০০ মিটার ব্যাকস্ট্রোকের। দুটি রিলের ব্রোঞ্জ। একটি মেডলি ও আরেকটি ফ্রি স্টাইলের।

তার আগে গত বছরই জুলাই মাসে জুনিয়র ন্যাশনালে জিতেছে আধ ডজন পদক। দুটি করে সোনা, রুপো ও ব্রোঞ্জ। সোনা দুটি নিজের দুই প্রিয় ইভেন্ট ৫০ ও ১০০ মিটার ব্যাকস্ট্রোকে। ওই দুই ইভেন্টেই করেছে মিট রেকর্ড।

ক্যানিংয়ের নাগরতলা গ্রামে বাপি লস্করের বাড়ি। এখন অবশ্য পরিবার নিয়ে থাকেন তালদির রাজপুর গ্রামে। বছর দেড়েক আগে রাজপুরের ওই বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন হাওড়ার বালিতে। সেটা সাহিলের সাঁতারের জন্যই। ছেলে যাতে ভালো কোচিং পায়, সেজন্য বালি গ্রামাঞ্চলে কোচ সুব্রত ভট্টাচার্যের কাছে ভর্তি করে দিয়েছিলেন বাবা-‌মা। কিন্তু তালদি থেকে রোজ যাতায়াত করা সম্ভব নয়। আবার একা ছেলেকে বালিতে কোথাও রেখে দেওয়ায়ও সমস্যা। তাই তালদির রাজপুরের বাড়ি ছেড়ে পুরো পরিবার নিয়েই বাপি চলে যান বালিতে। ওখানে থাকতে শুরু করেন ঘর ভাড়া নিয়ে। লকডাউন ঘোষণা হতেই রাতারাতি বালির ভাড়া বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছেন রাজপুরে। করোনা-‌আতঙ্ক মিটলে আবার চলে যাবেন বালিতে। বাপি বললেন, ‘সংসার চালাতে এমনিই অনেক সমস্যা ছিল। বালিতে চলে যাওয়ার পর সেটা আরও বেড়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় ওর মা-‌র আয়। নতুন জায়গায় গিয়ে আমিও কাজ পেতাম না। মাঝেমধ্যে কলকাতায় এসে কিছু কাজ করতাম। তাতে আর কী করে সংসার চলবে!‌’

খেলো ইন্ডিয়ার স্কিমে মাসিক ১০ হাজার টাকা স্কলারশিপ পায় সাহিল। আর্থিক দুর্দশা তো ছিলেই। আর এখন তো করোনা, আমফান মিলিয়ে গভীর সঙ্কটে সাহিলের বাবা-‌মা। নিজের গ্রামে ফিরে এলেও কাজ নেই স্বামী-‌স্ত্রী কারও। সাহিলের স্কলারশিপের ওই ১০ হাজার টাকাই এখন সংসারের ভরসা। ওই টাকাতেই চালাতে হচ্ছে সংসার। যা আসলে সরকার দেয় খেলাধুলো ভালোভাবে চালানোর জন্য। বাপি জানালেন, সাহিলের বেঙ্গালুরুর এক সাঁতারু বন্ধুর মা ওঁদের দুর্দশার খবর শুনে মাঝেমধ্যে টাকা পাঠাতেন। যাতে সাহিল পুষ্টিকর খাবার খেতে পারে। কিন্তু সেই টাকাও খরচ হয়ে যেত সংসার চালাতেই।

আমফানের আক্রমণে দক্ষিণ ২৪ পরগনার আরও অনেক গ্রামের মতো ক্ষতি হয়েছে সাহিলদের রাজপুরেরও। ক্ষতি হয়েছে সাহিলদের বাড়িরও। বাপি জানালেন, অনেকে সরকারি সাহায্য পেলেও ওঁরা পাননি। কারণ ওঁদের যাবতীয় পরিচয়পত্র ক্যানিংয়ের বাড়ির ঠিকানায়।

এত সমস্যা। বাড়িতে আর্থিক অনটন। সাহিল কিন্তু বসে নেই। ‘‌আমাকে বড় সুইমার হতেই হবে’‌—এই পাঁচটি শব্দই শুধু ওর মুখে। ওই ‘‌বড় সুইমার’‌ হওয়ার লক্ষ্যে গ্রামের পুকুরে সাঁতার কাটছে। বাড়ির উঠোনেই ফিজিক্যাল ট্রেনিং সেরে নিচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই আবার মা-‌বাবার সঙ্গে চলে যাবে বালিতে। 

‌‌‌

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here