আলুসেদ্ধ-‌ভাত খেয়ে ‘‌বেঁচে আছেন’‌ রুবিয়া

0
107

নির্মলকুমার সাহা

করোনা ভাইরাস কেড়ে নিয়েছে সারা বিশ্বের অজস্র খেলোয়াড়ের এবারের অলিম্পিক-‌স্বপ্ন। এখন তো একই শহরে আগে-‌পড়ে হয় প্যারালিম্পিকও। স্বপ্ন-‌স্থগিত প্যারা খেলোয়াড়দেরও। ওই তালিকায় আছেন উত্তর ২৪ পরগনার হালিসহরের বারেন্দ্র পল্লীর প্যারা অ্যাথলিট রুবিয়া চ্যাটার্জি। টোকিওর প্যারালিম্পিকের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণ নেওয়ার বদলে তিনি এখন পাড়ার পার্কে একা একা অনুশীলন করে চলেছেন। লকডাউনের শুরু থেকেই বাড়িতে আটকে আছেন রুবিয়া। প্রথমদিকে বাড়ির ভেতরই ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম করতেন। এখন পাড়ার পার্কে ডিসকাস থ্রো, শটপাট অনুশীলনও চলছে। ফোনে রুবিয়া বললেন, ‘‌লকডাউনের শুরুর দিন থেকেই বাড়িতে। বাড়ি আর পার্ক করেই এখন সময় কাটছে। এর বাইরে কোথাও পা ফেলিনি। দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছে!‌’‌
মার্চের প্রথম সপ্তাহে সল্টলেকে প্যারা অ্যাথলেটিক্সের রাজ্য প্রতিযোগিতায় তিনটি সোনা জিতেছেন। শটপাট, ডিসকাস ও জ্যাভেলিন থ্রোয়। ওই মার্চের শেষ সপ্তাহে বেঙ্গালুরুতে হওয়ার কথা ছিল জাতীয় প্রতিযোগিতা, প্যারালিম্পিকের জন্য ভারতীয় দল গড়ার ট্রায়ালও। করোনায় যা বাতিল হয়ে যায়। রুবিয়া বললেন, ‘‌খুব ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম ন্যাশনালের জন্য। ন্যাশনালের পরই শুরু করে দিতাম প্যারালিম্পিকের প্রিপারেশন। সব জলে গেল। এক বছর প্যারালিম্পিক পিছিয়ে গেছে। সামনের বছরও হবে কিনা, তা নিয়েও তো কেউ নিশ্চিত নয়!‌’
এখন আরও অনেকের মতো রুবিয়ারও অপেক্ষা করা ছাড়া দ্বিতীয় কোনও পথ নেই। বললেন, ‘‌প্র‌্যাকটিস করে যাওয়া ছাড়া কোনও পথ নেই। আর সেই প্র‌্যাকটিসের জন্য মাঠে যাওয়ারও উপায় নেই। এখন বাড়ির পাশের পার্কই ভরসা।’‌ এখনও ঠিক আছে, মানে সরকারিভাবে বাতিল হয়নি প্যারা অ্যাথলেটিক্সের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ। যা হওয়ার কথা ২০ ডিসেম্বর থেকে। ‘‌যদি হয়’—‌ কিছুটা আশায় আছেন রুবিয়া। বললেন, ‘‌সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তবে এখনও বাতিল না করায় ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপটাই টার্গেট হিসেবে মাথায় আছে।’‌
কিন্তু যেভাবে ‘‌বেঁচে আছেন’‌ রুবিয়া তাতে কী করে প্রস্তুতি নেবেন?‌ শ্বশুর, শাশুড়ি, স্বামী ও রুবিয়া— ৪ জনের সংসার। হাজার চেষ্টা করেও চাকরি পাননি রুবিয়া। স্বামী অভিজিৎ চ্যাটার্জি সিকিউরিটি গার্ডের কাজ করেন। লকডাউনের দিন থেকেই আর কাজে আসেননি। রুবিয়া বললেন, ‘‌ওর কাজ নিউ টাউনে। হালিসহর থেকে কী করে যাবে?‌’‌ ফলে লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে সংসারে আর আয় নেই। রুবিয়া জানালেন, এখন মাইনে না পেলেও যে সিকিউরিটি এজেন্সিতে অভিজিৎ কাজ করেন লকডাউন পুরোপুরি উঠে গেলে সেখানকার কাজে যোগ দিতে পারবেন। সে তো পরের কথা। কিন্তু এখন কেমন আছে ওঁদের পরিবার?‌ রুবিয়া বললেন, ‘‌মাসের পর মাস আলুসেদ্ধ-‌ভাত খেয়ে বেঁচে আছি!‌ এটাও হয়ত জুটত না। রেশনে চাল দিচ্ছে বলে চলে যাচ্ছে।’‌

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here