দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: অতিমারি কোভিড ১৯ করাল গ্রাসে নাভিশ্বাস বিশ্ব অর্থনীতি জুড়ে। হু হু করে বেড়েই চলেছে বেকারত্ব। একের পর এক বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানে করোনা অতিমারির জেরে শিকেয় উঠেছে অর্থনীতির ভারসাম্য। কোপ এসে পড়েছে শ্রমিক কর্মচারীর কঁপালে। চিন্তার ভাঁজ কপাল জুড়ে কবে মুক্তি পাওয়া যাবে এই অতিমারির পরিস্থিতি থেকে।
বিশ্বের তাবড় অর্থনীতিবিদরা চুলচেরা বিশ্লেষণে মন দিয়েছেন অতিমারির পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য। এই প্রসঙ্গে জার্মান জব মার্কেট মনে করছে আগামী তিন বছর অতিমারি করোনা ভাইরাস ফ্রন্টফুটে বিশ্ব অর্থনীতিকে শাসন করে যাবে। নিজেদের বক্তব্যের পিছনে যুক্তি দিতে গিয়ে জার্মান জব মার্কেটের সাফ কথা, ২০২২ সাল এমনকি ২০২৩ সালের আগেও আমরা অতিমারির আগের পরিস্থিতিতে ফিরে আসতে পারবো না। প্রসঙ্গত জার্মান ফেডারেল এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সির প্রধান ডেটলেফ স্কেলি বলেছেন,’আমরা বিশ্বাস করি ফের আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবো।’ পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে চমকে দেওয়ার মতো তথ্য, যা তাবড় অর্থনীতিবিদদের ভ্রু কুঁচকে যাওয়ার মতোই। পরিসংখ্যান বলছে, বিগত জুন মাসে জার্মানির বেকারত্বর হার ছিল ৬.২% অর্থাৎ ২.৮৫ মিলিয়ন জার্মান বেকারত্বর নাগপাশে জড়িয়ে পড়েছেন। চলতি অতিমারি কোভিড ১৯ এর থাবায় এখনও পর্যন্ত ৬,৪০,০০০ মানুষ কর্মহীন হয়ে দিনগুজরাল করে চলেছে। এখানেই থেমে না থেকে স্কেলি এও বলেছেন,’আমরা আশা করছি অতিমারি ধাক্কা কাটিয়ে অর্থনীতির স্বাস্থ্য পুনরায় ফিরে আসবে।’
করোনা ভাইরাস শুধুমাত্র অর্থনীতির চাকাকে থামিয়ে দিয়েছে তাইই নয়, সঙ্গে অর্থনীতির চিন্তা ভাবনাকেও প্রভাবিত করে তুলেছে। অতিমারির পরিস্থিতিতে জার্মানিতে ‘স্বল্প সময়ের কাজ’ জার্মান ভাষায় ‘ক্রুরজারবেইট’ মানুষের কাছে আলোচনার মুখ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। যে সমস্ত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান অতিমারির কোপে প্রহর গুনে চলেছে তাদের কাছে এবং কর্মহীনদের কাছেও ক্রুরজারবেইট হয়ে উঠেছে আর্কষণীয়। তবে জার্মানির ফেডারেল এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সির প্রধান কিন্তু এই স্বল্প সময়ের কাজের তত্ত্বর সঙ্গে সহমত পোষণ করে উঠতে পারেন নি। স্কেলির মতে, এর ফলে বৃহৎ আকারে কাজের গতি ধাক্কা পাবে। স্কেলির এই বিষয়ে মত হল,’ অতিমারির পরিস্থিতিতে বৃহৎ আকারে উৎপাদনের কোন ইঙ্গিত নেই।
এদিকে জার্মানির অর্থমন্ত্রী পিটার অল্টমায়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন,’ চলতি মাসের শেষে দেশে বেকারত্বর হার আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে তিনি এও বিশ্বাস করেন যে, চলতি বছরের অক্টোবর থেকে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে।
অন্যদিকে অতিমারির পরিস্থিতির মধ্যেই দুমাসের জন্য জরুরী অবস্থা জারি করা হয়েছে। চলতি বছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত এই জরুরী অবস্থা জারি থাকবে। যদিও সেদেশের মানুষের মধ্যে এই জরুরী অবস্থার কার্যকারীতাকে ঘিরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিয়েছে। এই বিষয়ে থাইল্যান্ডের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের সেক্রেটারি জেনারেল সোমস্যাক রুংগসিটা জানিয়েছেন,’ দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য এই জরুরী অবস্থার প্রয়োজন রয়েছে। আগামী দিনে বাণিজ্য সম্মেলন আর পর্যটনের হাত ধরেই দেশকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। এই সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র প্রশাসনিক নয়। দেশের চিকিৎসক মহলও এই সিদ্ধান্তে সম্মতি জানিয়েছেন, এমনই বক্তব্য উঠে এসেছে থাইল্যান্ডের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের সেক্রেটারি জেনারেলের মুখ থেকে। তবে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, নিঃশব্দ ঘাতক করোনা ভাইরাসের গোষ্ঠী সংক্রমণের হাত থেকে বাচতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে থাইল্যান্ড প্রশাসন। এদিকে মারণ এই ভাইরাসের থাবায় থাইল্যান্ডের কৃষি ক্ষেত্র এবং নির্মাণ শিল্পে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। অতিমারির জেরে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। এই কারণে থাইল্যান্ড প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ১২০,০০০ পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনা হবে মায়ানমার, লাওস, কম্বোডিয়া থেকে। এরপর ধাপে ধাপে থাইল্যান্ডের সীমান্ত খুলে দেওয়া হবে বিদেশি পর্যটক থেকে শুরু করে চিকিৎসার কারণে যারা থাইল্যান্ডে আসতে চান সঙ্গে বাণিজ্যিক প্রতিনিধিদের জন্য। সবকিছু ঠিকঠাক চললে চলতি বছরের আগস্টের ১ তারিখ থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে। বর্তমানে থাইল্যান্ডে ৩০০০ সক্রিয় করোনা রোগী সংখ্যা পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে মারা গিয়েছে ৫৮ জন।