The Calcutta mirror desk: যখন গোটা রাজ্য দুর্গাপূজার আনন্দে মেতে ওঠে, তখন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট ব্লকের বোয়ালদাড় গ্রাম পঞ্চায়েতের ফুলঘরা গ্রামের ছবিটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানে দুর্গাপূজার বদলে হয় মা মনসার পূজা। গ্রামের মানুষরা দেবী দুর্গার স্থানে মা মনসাকেই পূজা করে আসছেন দীর্ঘ প্রায় তিনশো বছর ধরে। দুর্গাপূজার সমস্ত নিয়ম মেনেই এখানে মনসা দেবীর আরাধনা করা হয়। প্রকৃতপক্ষে, এখানে মনসার রূপেই দেবী দুর্গার পূজা করা হয়। এই কয়েকটা দিন পুরো গ্রাম উৎসবে মেতে ওঠে, আর ফুলঘরা গ্রাম পরিণত হয় এক মিলন কেন্দ্রে।গ্রামের বহু মানুষ এবং পশুপাখি সাপের কামড়ে মারা যেতেন। অনেক চেষ্টা করেও গ্রামবাসীরা যখন কোনো উপায় পাচ্ছিলেন না, তখন গুদর মণ্ডল নামের এক গ্রামবাসী স্বপ্নাদেশ পান। দেবী মনসা তাঁকে বলেন, গ্রামে মনসা পূজা করলে আর কেউ সাপের কামড়ে মারা যাবে না। এরপর তিনি আত্রেয়ী নদীতে মা মনসার একটি কাঠামো ভেসে যেতে দেখেন। সেই কাঠামোটি তুলে এনে গ্রামে মন্দির স্থাপন করে মনসা পূজা শুরু হয়।
প্রথমে শ্রাবণ মাসে এই পূজা হলেও, এলাকার কোথাও দুর্গাপূজা না হওয়ায় পরে শরৎকালে এই পূজা শুরু হয়। সেই থেকে ফুলঘরা বারোয়ারি মনসা পূজা কমিটি দুর্গা পূজার সময় মা মনসার পূজা করে আসছে। পূজার কয়েকদিন চণ্ডী ও মনসামঙ্গল গান হয়। পুজোর সময় গ্রামের আত্মীয়-স্বজনরা একত্রিত হন। এখানে মনসা প্রতিমার একপাশে লক্ষ্মী এবং অন্যপাশে সরস্বতী দেবী থাকেন। পূজার চার দিন গ্রামের সবাই নিরামিষ খাবার খান। এই পূজা গ্রামের আট থেকে আশি সবার মধ্যে আজও এক নতুন উদ্দীপনা নিয়ে আসে। এই উপলক্ষে বহিরাগত ও স্থানীয় শিল্পীদের অংশগ্রহণে নাটক, যাত্রা ও গান অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া, পূজার সময় গ্রামে একটি মেলাও বসে। দুর্গাপূজার আনন্দ একাকার হয়ে যায় মনসা পূজোর ঢাকের আওয়াজে।