The Calcutta Mirror Desk :
বিশ্বজুড়ে এ নামেই প্রসিদ্ধ কলকাতা। এ শহরের সঙ্গে জড়িয়ে কয়েক শতকের ইতিহাস, নানা ঘটনা। এক কালে ব্রিটিশদের রাজধানী এই কলকাতাতেই রয়েছে কিছু জায়গা, ভূতুড়ে বলেই যাদের সুনাম, নাকি কুখ্যাতি? সেই জায়গাগুলি কারও ভয়ের শিরশিরানি, আবার কারও অসীম কৌতূহল। ভূতচতুর্দশী এল বলে! ঝটপট জেনে নিন সেই সব ভূতুড়ে ঠিকানার খোঁজ। সাহস থাকলে ঘুরেই আসুন না এক বার!
জাতীয় গ্রন্থাগার: তৎকালীন ব্রিটিশ গভর্নর-জেনারেলের বাসস্থান হিসাবে ব্যবহৃত হত এই বাড়িটি। পরবর্তীতে গ্রন্থাগারে রূপান্তরিত করা হয়েছে। ভারতের সর্ববৃহৎ এই গ্রন্থাগারের সঙ্গে জুড়ে আছে কিছু ভৌতিক অভিজ্ঞতার গল্প। রাতে যাঁরা এখানে পড়াশোনার কাজে কাটিয়েছেন, তাঁদের কারও কারও দাবি– বিশাল দেওয়ালে গভর্নরের স্ত্রী লেডি মেটকাফের বিবর্ণ ছায়া দেখা যায়। শোনা যায় তাঁর পায়ের শব্দও।
কলকাতা রেসকোর্স: রেসকোর্স বা রয়্যাল ক্যালকাটা টার্ফ ক্লাব নামের এই জায়গাটি নিয়েও আছে বহু গা ছমছমে গল্প। কথিত, জর্জ উইলিয়ামস নামে এক ব্যক্তি এই রেসকোর্সে একদা চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। বৃদ্ধ বয়সে তাঁকে এই রেসকোর্সেই মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। মানুষের বিশ্বাস, এখনও পূর্ণিমা রাতে সাদা ঘোড়ার সঙ্গে তাঁকে রেস ট্র্যাকেই দেখা যায়।
হেস্টিংসের বাড়ি: ব্রিটিশ ভারতে ওয়ারেন হেস্টিংসের স্মৃতি বিজড়িত এই বাড়িটি বর্তমানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এক মহিলা কলেজ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এখানকার পড়ুয়াদের অনেকেরই দাবি, বহু সময়ে তাঁরা এক অজানা ব্যক্তিকে ঘোড়ায় চড়ে যেতে দেখেছেন। অনেকে বলেন, এই বাড়ির ভিতর তাঁর পায়ের শব্দও শুনতে পেয়েছেন তাঁরা।
লোয়ার সার্কুলার রোড কবরস্থান: ভয় পাওয়ার জন্য এমনিতে ‘কবরস্থান’ শব্দটিই যথেষ্ট। লোয়ার সার্কুলার রোড কবরস্থান এমন একটি ভূতুড়ে জায়গা, যেটি বহু অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী। লোকে বলে, ব্রিটিশ যুগের এক সিভিল সার্ভেন্ট, স্যার উইলিয়াম হে ম্যাকনাগটেনকে যুদ্ধের সময়ে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছিল এবং তিনি এই কবর স্থানেই শায়িত। মনে করা হয়, তাঁর আত্মা আজও এই কবর স্থানেই ঘুরে বেড়ায়।
রবীন্দ্র সরোবর মেট্রো স্টেশন: হ্যাঁ, কলকাতা শহরের বুকে এই মেট্রো স্টেশনটিও নাকি ভূতুড়ে! বহু মানুষের বিশ্বাস, এখানে আত্মঘাতী মানুষদের আত্মা এই স্টেশন চত্বরেই ঘুরে বেড়ায়। অনেকে নাকি স্টেশনের স্তম্ভের পিছনে ছায়া দেখেছেন। কলকাতার সমস্ত মেট্রো স্টেশনগুলির মধ্যে এই স্টেশনেই সবথেকে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করা হয়।
কলকাতা ডক: কলকাতা ডক বা খিদিরপুর ডক হল কলকাতার এক বহু পুরনো ডক। কথিত, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে বাণিজ্যের কালে নবাব ওয়াজেদ আলি শাহকে ব্রিটিশেরা বিশ্বাসঘাতকতা করে মেরে ফেলেছিল এই ডকেই। বিভিন্ন সময়ে বহু নাবিক ও ব্যবসায়ী নাকি এই অঞ্চলে একটি ছায়াকে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছেন। অনেকে বিশ্বাস করেন যে, সেই ছায়া নবাবের শোকাহত আত্মার।
গঙ্গার ঘাট: কলকাতা মল্লিকঘাট ফুলবাজারের কাছে হাওড়া ব্রিজের নীচেই রয়েছে গঙ্গার একটি ঘাট, ভূতুড়ে ঘটনার জন্য যেটি রীতিমতো কুখ্যাত। অনেকে এখানে গঙ্গার মধ্যে থেকে একটি হাত বেরিয়ে থাকতে দেখা যায় বলে দাবি করেন। অনেকে মনে করেন, যাঁরা আত্মহত্যা করেন বা নদীতে ডুবে প্রাণ হারান, তাঁদের আত্মা এখানে ঘুরে বেড়ায়।
নিমতলা মহাশ্মশান: কলকাতার প্রাচীন মহাশ্মশানগুলির মধ্যে এটি অন্যতম। এখানে বিভিন্ন অলৌকিক ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটে চলে।
রাইটার্স বিল্ডিং: কলকাতার সবচেয়ে ভূতুড়ে স্থানের তালিকায় উপর দিকেই এর নাম। ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোত জড়িয়ে থাকা একদা প্রশাসনের সদর দফতর এই বাড়িটি এখনও সরকারি দফতর হিসাবেই ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন সময়ে কর্মীরা নাকি এখানে ব্রিটিশ কর্মচারীদের ছায়া দেখতে পেয়েছেন বলে দাবি করেন। তা ছাড়াও রাতে ফাঁকা ঘর থেকে টাইপরাইটারের শব্দ বা হাঁটাচলার শব্দও ভেসে আসে বলে অনেকের দাবি।
পুতুল বাড়ি: এই বাড়ি নিয়েও বহু জল্পনা আছে। অনেকের মতে, এই পরিত্যক্ত বাড়িটি নাকি ভূতুড়ে। কিছু লোক এখানে নীচের তলায় বসবাস করেন। উপরের সিঁড়িগুলি আর ব্যবহার হয় না। উপরতলার অনেক ঘরও তালাবন্ধ থাকে। কথিত, বৃটিশ যুগে বাংলার জমিদারদের হাতে অপহরণ, ধর্ষণ ও হত্যা-সহ বহু নারী-নির্যাতনের সাক্ষী ছিল এই বাড়িটি। সেই সব মৃত মহিলাদের শোকাহত আত্মারা নাকি এই বাড়িতে এখনও ঘুরে বেড়ায়।
উইপ্রো অফিস, সল্টলেক সেক্টর ফাইভ: বিশ্ববিখ্যাত এই সংস্থার কলকাতা অফিসটিরও ভূতুড়ে হিসেবে বেশ দুর্নাম। মনে করা হয়, এই অফিসটি একটি কবর স্থানের ওপর নির্মাণ করা হয়েছিল। রাতের শিফটের বহু কর্মী বিভিন্ন সময়ে অশরীরীর উপস্থিতির আভাস পেয়েছেন