The Calcutta Mirror Desk :
যুগ-যুগ ধরে রেডিয়োতে চিরন্তন হয়ে রয়েছে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মাতৃ-বন্দনা। ‘রেডিয়োর এই মহানায়ক’-কে টেক্কা দিতে পারেননি টালিগঞ্জের মহানায়কও। বলা ভালো, উত্তম কুমারকেও হার মানতে হয়েছিল একটা সময়ে। ১৯৭৬ সালে সে বার মহানায়কের গলা শোনা গিয়েছিল মহালয়ার ভোরে। কিন্তু আপামর বাঙালি তা মানতে পারেননি। আকাশবাণী কলকাতার বাইরে রীতিমতো বিক্ষোভ শুরু করেছিলেন তাঁরা। সেদিন ঠিক কি হয়েছিল বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের বাড়িতে?
যে প্রাণপুরুষের কণ্ঠের সৌজন্যে বাঙালির আবেগ দুর্গাপুজোর সূচনা হয়, আজ এত বছর পরে এই বিশেষ দিনটা ঠিক কেমন ভাবে উদ্যাপন হয় তাঁর বাড়ির অন্দরে? যোগাযোগ করা হয়েছিল বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের নাতি সায়ম ভদ্রের সঙ্গে। মিলল অনেক না জানা প্রশ্নের উত্তর। সায়ম ভদ্র বললেন, ‘১৯৭৬ সালের কথা। এখনও স্পষ্ট মনে আছে, সেদিনও প্রতিবারের মতো মহালয়া শুনতে ভোর চারটের সময়ে উঠে পড়েছিলাম। দাদু পাশের ঘর থেকে শুনছিলেন।
অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার মিনিটখানেক পরে আমাদের বাড়ির কালো টেলিফোনটা বেজে ওঠে। দু’মিনিট ফোনে কথা বললেন দাদু, তার পরে আমরা জিজ্ঞেস করলাম ফোনের ওপারে কে ছিলেন? উনি বললেন, নাট্যকার মন্মথ রায়। উনি দাদুকে খুব ধমক দিয়ে বলেছিলেন, কী ভাবে এই কাজটা হতে উনি অ্যালাউ করলেন। তার পরে মিনিটে-মিনিটে অজস্র ফোন। সবার একটাই অভিযোগ, এটা কী ভাবে হতে পারে? পরে জানতে পেরেছিলাম, আকাশবাণী ভবনের সামনে উন্মত্ত জনতা প্রায় গেট ভেঙে অফিসে ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন। জনতার চাপে সে বছর ষষ্ঠীর দিনে আবারও সম্প্রচারিত হয়েছিল বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে মহিষাসুরমর্দিনী।’
এ নিয়ে মহানায়কের সঙ্গে কোনও জটিলতা তৈরি হয়েছিল কি বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের? উত্তরে সায়ম ভদ্র বলেন, ‘এটা নিয়ে একটা মজার ঘটনা আমি ভাগ করে নিতে চাইব। প্রথমেই বলে রাখি, উত্তম কুমারের এখানে কোনও রকম দোষই ছিল না। দাদুর মনেও কোনও উষ্মা তৈরি হয়নি। ঘটনাটা হয়েছিল ইমার্জেন্সির সময়ে। সাউথ ব্লক থেকে অল ইন্ডিয়া রেডিয়োর কাছে নির্দেশ এসেছিল, সমস্ত কিছু বদলে ফেলতে হবে।
পুরোনো সবকিছু আমূল বদলে নতুন কিছু করার জন্যই এমন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। খারাপটা দাদুর সেখানেই লেগেছিল। কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে মহালয়ার তিন স্রষ্টাকে একবারও এই ইন্টিমেশনও দেওয়া হয়নি। মজার ব্যাপার হলো, উত্তম কুমারের কাছে যখন প্রস্তাব গিয়েছিল, উনি অনুমতি নিতে দাদুকে ফোন করেছিলেন। দাদু খুব স্বাভাবিক ভাবেই তাঁকে অনুমতি দিয়েছিলেন।’