ভট্টাচার্য বাড়িতে দুর্গাপুজোয় ব্রাত্য মায়ের চার সন্তান !

0
15

The Calcutta Mirror Desk  :

দেবী দুর্গার সঙ্গে যখন মহিষাসুরের যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, সেই সময়ে নাকি ছিলেন না চার সন্তান গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী এবং কার্তিক। অতএব আশ্বিনের শারদপ্রাতে তাঁরা কেন থাকবেন আটচালায় ? অতএব মলানদিঘি গ্রামের ভট্টাচার্য বাড়িতে দুর্গাপুজোয় ব্রাত্য উমার চার সন্তান!

বাড়ির মণ্ডপে দুর্গার সঙ্গী হিসেবে শোভা পান দুই সখী জয়া এবং বিজয়া। সিংহের গায়ের রঙ সাদা। কথিত রয়েছে, একটা সময়ে হিমালয় সংলগ্ন জঙ্গলে দেখা যেত সাদা সিংহ। তাই এখানেও বাহন শ্বেতবর্ণের।

ভট্টাচার্য পরিবারের পুজো কত পুরোনো, সেটা স্পষ্ট নয়। অন্তত পরিবারের এই প্রজন্মের তা নিয়ে কোনও ধারণাই নেই। একটা সময়ে পুজোয় বলি দেওয়া হতো ছাগলকে। সেই প্রথা পাল্টে এখন বলি হয় চালকুমড়োর। পারিবারিক পুজো হলেও গ্রামের সব মানুষ এই উৎসেব অংশ নেন।

পরিবারের সদস্যরা কর্মসূত্রে থাকেন বাইরে। তবে পুজোর চারটে দিন সব কাজ দূরে সরিয়ে সবই হাজির বাড়ির পুজোমণ্ডপে। হইহই, গল্প, আড্ডা, একসঙ্গে বসে খাওয়া। বাকি সময়ের জন্য নতুন শক্তি সঞ্চয় করে তাঁরা আবার ফিরে যান নিজেদের কর্মস্থলে।

ভট্টাচার্যদের পদবি আগে ছিল তর্কতীর্থ। এই পরিবারের পূর্বপুরুষেরা ছিলেন পণ্ডিত। সেই সময়ে তাঁদের হাতে লেখা কিছু পুথি এখনও অক্ষত রয়েছে সযত্নে। পরিবারের এক সদস্য বিশ্বনাথ তক্ততীর্থের টোল ছিল বাড়ির সামনেই। সেখানেই গ্রামের ছেলেরা পড়তে আসত। সময়ের সঙ্গে সেই টোল পরিণত হয়েছে আজকের ভট্টাচার্য পরিবারের দুর্গামন্দির।

কয়েক বছর আগেও ছিল মাটির দেওয়াল এবং টিনের চাল দেওয়া একটি মন্দির। এখন পাকা হয়েছে। কাঁকসা ব্লকের গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা গঙ্গাধর দাস তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে এই পরিবারের জন্য প্রতিমা গড়ে চলেছেন। তিনি বলছিলেন, ‘আমি তো ৩৫ বছর ধরে এই পরিবারের জন্য প্রতিমা তৈরি করি। তার আগে এই বাড়ির প্রতিমা গড়তেন আমার বাবা। বলতে পারেন, বংশ পরম্পরায় এই ভট্টাচার্য পরিবারের দুর্গা গড়ে তোলার সঙ্গে আমরাও ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে গিয়েছি।’

এই মুহূর্তে মন্দির এবং পুজোর দেখভাল করেন পরিবারের এক সদস্য শক্তিশঙ্কর ভট্টাচার্য। তিনি বলছেন, ‘আমাদের বাড়ির প্রতিমায় সেই গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী এবং কার্তিক। থাকেন জয়া এবং বিজয়া। আমাদের পরিবারের ১১ পুরুষের পুজো এটি। তারাচরণ ন্যায়রত্ন এই পুজোর প্রচলন করেছিলেন। সেই শুরু। আমরা বংশ পরম্পরায় তা ধরে রেখেছি। এই মুহূর্তে আমিই তার দেখভাল করি।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here