সন্তু ধর
কোভিড-১৯ এর কু প্রভাবে বিশ্বঅর্থনীতি খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে আর বাকি দেশগুলোর মতো নেপালের অর্থনীতিও এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
এমন কী নেপালের অধিকাংশ নাগরিকরা যারা আর কাজ খুঁজে পাচ্ছেন না তারা কৃষিকাজের মাধ্যমে তাদের পরিবারকে সহায়তা করতে বাধ্য হচ্ছেন। শুধু কোভিড-১৯ নয় এর অনুষঙ্গ হিসেবে হাজির ধ্বংসাত্বক কীটপতঙ্গ। যা এবার তাদের ফসলের প্রভূত ক্ষতি করছে।
নেপালের অধিকাংশ অঞ্চলে দু ধরণের পঙ্গপাল দেখা গিয়েছে, এবং আর একটি প্রজাতি নেপাল ঢোকার মুখে রয়েছে। এছাড়ও বিপুল পরিমাণে আর্মিওয়ার্ম রয়েছে।
মাস দুয়েক আগে নেপালের বাসিন্দা ৩৩ বছর বয়সী শেফ কৃষ্ণ প্রসাদ জাইসি প্রতিবেশী ভারতে চাকরি হারিয়েছেন। কারণ করোনা ভাইরাসের প্রকোপে হোটেলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি ব্যবসা এখনও বন্ধ থাকায়, তিনি নিশ্চিত নন যে সেই চাকরি তিনি আবার ফিরে পাবেন। তাই তিনি দেশে ফিরে এসেছেন।
তার পরিবারের পাঁচ জনের পেট চালানোর জন্য অন্য উপায় হিসেবে জাইসি এবার কৃষিকাজে হাত দিয়েছে। নেপালের পিউথানের কাছে দেড় হেক্টর জমি ইজারা দিয়েছেন। সেখানে ভুট্টা এবং ধানের মতো প্রধান প্রধান ফসল উত্পাদন করছেন। কিন্তু সে উপায়ও এখন পঙ্গপালের আক্রমণে ঘোর সঙ্কটে।
এ বছর নেপালে আর্মিওয়ার্ম প্রথম প্রবেশ করেছে। যা বিঘার পর বিঘা গম আর ভুট্টার ক্ষেত নষ্ট করে দিচ্ছে। জলবায়ুর পরিবর্তন পোকামাকড়ের প্রসারের পক্ষে অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করছে।
জাইসি আধ-খাওয়া ভুট্টার পাতার মাঝে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন-“আমি এই পোকা প্রথমবার দেখেছি এবং এর নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে আমার তেমন কোনো ধারণাও নেই”।
এই মাসের শুরুর দিকে তিনি এবং অন্যান্য গ্রামবাসীরা পঙ্গপালগুলির বিরুদ্ধে ধোঁয়া ব্যবহার করে এবং ক্যানেস্তারা পিটিয়ে পঙ্গপালের প্রথম ছোট ছোট ঝাঁকগুলোকে সাফল্যের সাথে বিতাড়িত করেছিলেন। তবে এখন একটি দ্বিতীয় ঝাঁক আসছেন, সেটাই শঙ্কার।
জইসি বলছিলেন, “আমি উদ্বিগ্ন ধান এবং বাকী ভুট্টা এই দ্বিতীয় ঝাঁকের আক্রমনের পরেও থাকবে কিনা।”
নেপালের কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন যে এই বছর গুরুত্বপূর্ণ অভিবাসী চাকরি, রেমিট্যান্স এবং ফসল অদৃশ্য হওয়ার সাথে সাথে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম দরিদ্র দেশ নেপালের পরিবারগুলি কে এই বছর ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের আরও ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির মুখোমুখি হতে হবে।
এই যেমন দুবাইতে ইলেক্ট্রিশিয়ান হিসাবে কাজ করার সময় পাইোনার অপর বাসিন্দা গিরিরাজ ভান্ডারী করোনাভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হন। সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে আসার পরে তিনি বিদেশে যে দক্ষতা অর্জন করেছেন তা ব্যবহার করে এখন তার নিজের দেশে চাকরির আশা করবেন সে সম্ভাবনাও দূর অস্ত।
কিন্তু নেপালের অর্থনীতি বিশ্বের অনেকের মতোই – করোনাভাইরাস জনিত বিধিনিষেধের অধীনে থেকে লড়াই করছে। তাই তিনি এবং তাঁর পরিবার স্বীকার করেছেন যে তাঁরা এরকম একটা খুব কঠিন সময় আশাকরি কাটিয়ে উঠতে পারবেন
তিন এখন কৃষিকাজে মনোনিবেশ করেছেন।
কিন্তু তার স্ত্রী বলছেন যে এই বছর খামারের জমিতে কীটপতঙ্গ আক্রমণ হওয়াতে তিনি এবং তার স্বামী তাদের পরিবারকে খাওয়াতে সক্ষম হবেন কিনা সে বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে, অন্য চাকরির বিকল্পগুলিও খুব ক্ষীণ।
পাইউথান পৌরসভার মেয়র অর্জুন কুমার কাক্স্যপতি বলেছেন, এ বছর প্রায় তিন চতুর্থাংশ ভুট্টা আর্মিওয়ার্ম দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল।
কাক্স্যাপ্তি বলেছিলেন, প্রায় ২ হাজারেরও বেশি মানুষ বিদেশ থেকে পাইথন পৌরসভায় ফিরে এসেছেন এবং আরও অনেক লোক এখনও আসছেন বলে তিনি জানান। এই পৌরসভাতে প্রায় ৩৮,৫০০ বাসিন্দা রয়েছেন।
মেয়র বলেছেন, প্রত্যাবর্তনকারীদের বেশিরভাগই উপার্জনের জন্য কৃষিকাজ করার চেষ্টা করবেন, কিন্তু সেই চেষ্টা তাদের কীটপতঙ্গ সমস্যা এবং ফসলের ক্ষতির ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে।
তবে এই সমস্যার সমাধান করতে পৌরসভা পুনরায় কৃষিকাজ সহজতর করার জন্য সীমিত তহবিল ব্যবহার করছেন।
তিনি বলেন, এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ডকে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেওয়ার জন্য জরুরী বরাদ্দ রয়েছে ৩০০,০০০ রুপি (২,৫০০ ডলার)।
এবং “যাদের কৃষিকাজের জন্য জমি নেই তাদের জন্য আমরা তাদের নির্মাণের মতো অন্যান্য খাতে কর্মসংস্থান দেওয়ার পরিকল্পনা করেছি।”
তবে তিনি স্বীকার করেছেন যে “বিদেশ থেকে প্রত্যাবর্তিত প্রত্যেকের জন্যই চাকরি দেওয়া সম্ভব নয় এবং এখনও বেশিরভাগ পরিবারের আয়ের প্রধান উত্স কৃষিকাজ”।
এর অর্থ এই মাসের শেষে আরও বেশি লোক ক্ষুধার্ত হতে পারে, বিশেষত পঙ্গপালের ক্ষতি বাড়লে মেয়রের পরিবার ও সেই ক্ষতি থেকে বাদ যাবেন না। মেয়র নিজেই সে আশঙ্কা করছেন।
কাক্স্যাপ্তি স্বীকার করেছেন, “যখন সবকিছু ভুল পথে এগিয়ে চলছে তখন কৃষিকে সমৃদ্ধ করা আমাদের পক্ষে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।” আর সেই মূহুর্তে নেপালের আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ভারতের বিরুদ্ধে একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত দেশের মানুষ কে আর ও চরম দারিদ্র্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে।
কাক্স্যাপ্তির মত অনেকেরই মত, চীনের কু প্রভাব দেশকে অচিরেই এক ভয়ংকর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি করবে যেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে কিনা সেটা আগাম অনুমান করা যাচ্ছে না।