প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে। ভার্সাই সন্ধিতে নাম লিখিয়েছে মিত্র শক্তি আর অক্ষ শক্তি। কিন্তু রাইন নদীর জল এই ভার্সাই সন্ধির প্রেক্ষাপটেই উত্তাল হওয়ার মুখে। সময় আসলো অয়্যাডলফ হিটলারের ক্ষমতা দখলের হাত ধরে। বিপুল সংখ্যাগোরিষ্ঠতায় ভর করে নাৎসি দল জার্মানির মসনদে। জার্মান জাত্য অহংকার সেই শুর। জণগণের মস্তিস্কে নির্লজ্জভাবে সূচ ফুটিয়ে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হল চরম মিথ্যাচার। জার্মান জাতি শ্রেষ্ঠ জাতি। লাগাতার জার্মান বেতারমাধ্যমে প্রচার জাতির শ্রেষ্ঠত্ব সঙ্গে শক্রুর প্রতি চরম বিদ্বেষ, ঘৃণা হিংসা। মূল লক্ষ্য জার্মান শিল্পায়নের পথকে আরও প্রশস্ত করে শিল্পজাত দ্রব্যের বাজারিকরণ।
ইংল্যান্ড, ফ্রান্সের শিল্পায়নের ধাক্কায় বাজারে পসরা সাঁঝিয়ে বসতে পারছে না জার্মান শিল্প মহল। এদিকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিধ্বস্ত জার্মান অর্থনীতি দুনিয়া জুড়ে বিপুল বাজারের গন্ধ শুকে ফেলেছে। হুমড়ি খেয়ে পরলেই তো চলবে না। জায়গা পেতে হবে। জায়গা পেতে হলে এমনিতে কেউ দেবে না। ছিনিয়ে নিতে হবে, করতে হবে দখল।
এমনই আবহ প্রকাণ্ড ঘূর্ণিঝড় আকারে আছড়ে পড়তে লাগলো নাৎসিদের স্বপ্নকে বহন করে। প্রতিরক্ষা খাতে উৎপাদনের বৃদ্ধির সঙ্গেই রাইন নদীর উপত্যকা উত্তাল হতে শুরু করলো। ভার্সাই সন্ধি লংঘন করে জার্মানির সেনা মোতায়েন। ইংল্যান্ড সবকিছু দেখলো, বুঝেও চুপ করেই থাকলো। অস্থির হয়ে উঠলো ফ্রান্স। ইংল্যান্ডের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকলো জার্মানির রাইন উপত্যকায় বাড়বাড়ন্ত ঘিরে। ইংল্যান্ড তবুও চুপ। কারন পুঁজিবাদের ভয়, আতঙ্ক সোভিয়েত রাশিয়াকে ঘিরে। সোভিয়েত শক্তির বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের জার্মানির প্রতি তোষণ নীতি ইতিহাসে আজও বহু চর্চ্চিত বিষয়। সোভিয়েতের বিরুদ্ধে শক্ত প্রাচীর হিসেবে জার্মানিকে সামনে রেখে ইংল্যান্ড বিশ্ব শাসন করতে চেয়েছিল, নিশ্চিন্তে, নিরাপদে!
পাঠকেরা ভাবতেই পারেন এই প্রসঙ্গ কেন? বর্তমান চীন ভারত দ্বন্দ্ব ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে চলেছে কি? ১১ সপ্তাহ ধরে লাইন অফ অয়্যাকচুয়াল কন্ট্রোলে ভারত আর চীন মুখোমুখি, দুই দেশের সেনাদের হাতেই অস্ত্র।
এরই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে ভারতের সমরাস্ত্র কেনার তাগিদ। বকেয়া অস্ত্র চুক্তি সাততাড়াতাড়ি সেড়ে ফেলা হয়েছে এবং হচ্ছে। এলএসি জুড়ে যুদ্ধের দামামা।
লাদাখে লাইন অফ অয়্যাকচুয়াল কন্ট্রোলে ভারত চীন যুযুধান দুই দেশের সেনা রক্তাক্ত হতেই আসরে ঝাঁপিয়ে পড়েছে মার্কিন প্রশাসন। দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়াতে লাল ফৌজের ভারী বুটের আওয়াজ না পসন্দ মার্কিন প্রশাসনের, কোন কালেই। সাগর জুড়ে আর দুই পাড়ে ড্রাগনের জাল বিস্তার মার্কিন অর্থনীতির দমবন্ধকর দশা। ড্রাগনকে সবক শেখানোর জন্য, দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়াতে লাল ফৌজকে টক্কর দেওয়ার জন্য প্রাচীর কি তাহলে ভারত? ভারতকে মার্কিন আশ্বাস, আরও বেশি করে দুই দেশের মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান প্রদান, সামরিক সহযোগীতা।
শুধু কথায় নয় কাজেও। মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব মাইক পম্পেও কথা বলা ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকরের সঙ্গে, জুনের তৃতীয় সপ্তাহে। দুই দেশের প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের আধিকারিকদের একবার নয় দুবার টেলিফোনিক আলোচনা দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ার রাজনীতি কেঁপে উঠতে বাধ্য।
শুধু এখানেই শেষ নয়। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে মার্কিন প্রশাসনের আধিকারিক রর্বাট ও ব্রায়েন এবং মার্কিন জয়েন্ট চিফ অফ স্টাফ জেনারেল মার্ক এ মিলির সঙ্গে ভারতের চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াতের কথা হয়েছে বিগত সপ্তাহে।
প্রকাশিত খবর অনুযায়ী ভারত মার্কিন দুই দেশের শীর্ষ আধিকারিকদের মধ্যে এই কথা বার্তায় দুই দেশ সম্মতি জানিয়েছে এই মর্মে দুই দেশ নিরাপত্তা, সামরিক এবং গোয়েন্দা তথ্য একে অপরের সঙ্গে বিনিময় করবে।
ভারত মার্কিন এই সখ্যতা এমনই আবহে ঘরে বাইরে ভারতও যথেষ্ট চাপের মধ্যে রয়েছে। তাই সম্প্রতি ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকরের বিবৃতি প্রকাশ্যে এসেছে। ভারতের বিদেশমন্ত্রীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘নির্জোট আন্দোলন এখন অতীত। ভারত কোন জোটের সঙ্গে নেই।