দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো :
মা লক্ষ্মীর আগমনে আপনার ঘর ভরে উঠুক ধন-ধান্যে ও সুখ-শান্তিতে। এই বছর পুরোহিত ছাড়া খুব সহজ পদ্ধতিতে বাড়িতেই মায়ের পূজা সম্পন্ন করুন। জেনে নিন পূজার নির্ঘণ্ট, উপকরণ ও সকল নিয়মাবলী।
🗓️ *কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা ২০২৫-এর নির্ঘণ্ট*
এই বছরে কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা অনুষ্ঠিত হবে ৬ই অক্টোবর, ২০২৫ (১৯শে আশ্বিন, ১৪৩২), সোমবার।
*পূর্ণিমা শুরু:* সোমবার, সকাল ১১:২৪ মিনিট থেকে।
*পূর্ণিমা শেষ:* মঙ্গলবার, সকাল ৯:৩৩ মিনিট পর্যন্ত।
*পূজার শুভ সময়:* সোমবার, সন্ধ্যা ৫:১৮ থেকে রাত্রি ৬:৫৪ পর্যন্ত।
🌺 *লক্ষ্মী পূজার উপকরণ*
সাধারণ উপকরণ:
সিন্দুর, অধিবাসডালা, তিল, হরিতকী, ঘট, একসরা, আতপচাউল (পরিমান মত), ঘট ঢাকার জন্য গামছা, কুণ্ডহাঁড়ি, তেকাঠা, দর্পণ, পঞ্চগুঁড়ি, পঞ্চগব্য, পঞ্চরত্ন, সশীষ ডাব, তীর, ফুল, দূর্ব্বা, আসনাঙ্গুরীয়ক, মধুপর্কের বাটী, লোহা, শঙ্খ, সিন্দূরচুবড়ি, দধি, মধু, ফুলের মালা, চন্দ্রমালা, গব্যঘৃত, নারিকেল, পান, চিনি, নৈবেদ্য, কুচা নৈবেদ্য, ভোগের দ্রব্যাদি, কর্পূর, চিঁড়া, এবং মায়ের জন্য শাড়ি (ঐচ্ছিক)।
মূর্তি তুলে পূজা করলে অতিরিক্ত লাগবে:
নারায়ণের ধূতি, পেচক পূজার ধূতি, বালি, কাষ্ঠ, খোড়কে, ঘৃত (এক পোয়া), হোমের জন্য বিল্বপত্র (২৮টি), চানের মশলা, থালা, ঘটি, রচনা, পূর্ণপাত্র ও দক্ষিণা।
✨ পুরোহিত ছাড়া পূজার সহজ পদ্ধতি
১. আত্মশুদ্ধি:
মাথায় গঙ্গাজল নিয়ে নারায়ণকে স্মরণ করুন। এরপর সূর্যের উদ্দেশ্যে জল অর্পণ করুন।
২. ঘট স্থাপন:
পূজার আসন এবং সমস্ত উপকরণের উপর গঙ্গাজল ছিটিয়ে শুদ্ধ করে নিন। এবার মায়ের সামনে সামান্য ধান ও মাটি ছড়িয়ে তার উপর জলভরা ঘট স্থাপন করুন। ঘটের গায়ে সিঁদুর দিয়ে স্বস্তিকা চিহ্ন এঁকে দিন এবং ঘটে বিজোড় সংখ্যার আমপল্লব, একটি কলা বা হরীতকী ও ফুল দিন।
৩. ধ্যান:
মা লক্ষ্মীর রূপ স্মরণ করে ধ্যান করুন। সম্ভব হলে এই মন্ত্রটি পাঠ করুন:
ধ্যানমন্ত্র:
ওঁ পাশাক্ষমালিকাম্ভোজ-শৃণিভির্যাম্য-সৌম্যয়োঃ। পদ্মাসনস্থাং ধ্যায়েচ্চ শ্রীয়ং ত্রৈলোক্যমাতরম্।। গৌরবর্ণাং সুরূপাঞ্চ সর্বালঙ্কার-ভূষিতাম্। রৌক্মপদ্ম-ব্যগ্রকরাং বরদাং দক্ষিণেন তু।।
৪. আবাহন:
মনে মনে মা-কে আপনার গৃহে আহ্বান করুন।
আবাহন মন্ত্র:
ওঁ লক্ষ্মীদেবী ইহাগচ্ছ ইহাগচ্ছ ইহ তিষ্ঠ ইহ তিষ্ঠ ইহ সন্নিধেহি ইহ সন্নিরুদ্ধস্য অত্রাধিষ্ঠান কুরু মম পূজান গৃহাণ।
(সহজ বাংলায় বলুন, “এসো মা লক্ষ্মী, বসো মা লক্ষ্মী, যতক্ষণ তোমার পূজা করি, ততক্ষণ তুমি আমার গৃহে স্থির হয়ে থাকো মা।”)
৫. পূজা ও পুষ্পাঞ্জলি:
প্রথমে ধূপ ও তারপর প্রদীপ দেখান। এরপর নৈবেদ্য নিবেদন করুন। শেষে ফুল দিয়ে তিনবার পুষ্পাঞ্জলি দিন।
পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র:
এষ সচন্দনপুষ্পাঞ্জলি ওঁ শ্রীঁ লক্ষ্মীদেব্যৈ নমঃ।
পুষ্পাঞ্জলির পর ঘটে নারায়ণের উদ্দেশ্যে একটি ফুল ও দুটি তুলসীপাতা, ইন্দ্র ও কুবেরের নামে দুটি ফুল এবং মায়ের বাহন পেচকের জন্য একটি ফুল দিন।
৬. প্রণাম:
ভক্তিভরে মাকে প্রণাম করুন।
প্রণাম মন্ত্র:
ওঁ বিশ্বরূপস্য ভার্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে। সর্বতঃ পাহি মাং নিত্যং দেবি মহালক্ষ্মী নমোহস্তুতে।।
শেষে ব্রতকথা ও পাঁচালী পাঠ করুন বা শুনুন।
বিশেষ দ্রষ্টব্য (অবশ্যই মনে রাখবেন)
▪️ লক্ষ্মীপূজায় কাঁসর বা ঘণ্টা বাজাবেন না, কারণ দেবী উচ্চ শব্দ পছন্দ করেন না।
▪️ পূজায় মা লক্ষ্মীকে তুলসীপাতা দেবেন না।
▪️ লোহার কোনও বাসন ব্যবহার করবেন না।
▪️ মনে রাখবেন, মা লক্ষ্মী ভক্তের কাছ থেকে ভক্তি ছাড়া আর কিছুই চান না। তাই শুদ্ধাচারে, ভক্তিমনে পূজা করাই প্রধান।