সৃষ্টির কয়েক মুহূর্ত পর!

0
56

ডঃ অনিন্দ্য দাস

ধরা যাক গায়ে গোল গোল রং বে বেরং এর ছিটে দেয়া একটা বেলুন কিনলেন। ওটাকে যদি ফু দিয়ে ফোলাতে শুরু করেন তবে বেলুনের দূরবর্তী অংশ আগে স্ফীত হবে এবং গোল গোল ছিট গুলোও বৃদ্ধি পাবে ও একে অপরের থেকে দূরে সরে যেতে থাকবে। কিন্তু সেই প্রসারনের একটা সীমা থাকবে, তার হাওয়া বেরিয়ে যাবার সাথে সাথে সে পূর্বাবস্থায় ফিরে আসবে। খুব সহজে বলা যায় বিন্দুতে সিন্ধু দর্শনের মতো এটা বেলুনে ব্রম্হান্ড দর্শন।

এবার আসি মূল প্রতিপাদ্য বিষয়ে, অর্থাৎ ব্রম্হান্ড সৃষ্টির রহস্য উন্মোচন তত্ত্বে, বলা ভালো সৃষ্টির পর থেকে তার ক্রমবিকাশ তত্ত্বে। বিজ্ঞানীরা এই রহস্যভেদে সহমত না হলেও অধিকাংশের মতে বেলুনের প্রাথমিক অবস্থা বা কোনো এক সিঙ্গুলারিটি থেকে এর ক্রমবিকাশ। আধুনিক বিজ্ঞান কিন্তু সেই সিঙ্গুলারিটির জন্ম রহস্য ভেদ করতে পারেনি। বরং তার কিছুসময় পরের অবস্থা থেকে যুক্তি গ্রাহ্য ব্যাখ্যা দিতে সমর্থ হয়েছে। আনুমানিক 13.8বিলিয়ন বছর আগের কথা, আজকের এই অসীম বিশ্ব ব্রম্হান্ড তখন ক্ষুদ্র এক বিন্দুর মধ্যে চূড়ান্ত অস্থিরতায় অপেক্ষমান! এই গ্রাভিটেশনাল সিঙ্গুলারিটিই বিজ্ঞানী মহলে প্রাইমেভিটাল এগ বা কসমিক এগ নামে পরিচিত। আগেই বলেছি একদম সৃষ্টির মূহুর্ত অর্থাৎ বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরনের  আগের অবস্থা বিজ্ঞান এখনও বলতে অপারগ। সৃষ্টির 1undecillionth মিনিট পর(১মিনিট কে ১এরপর ৩৬টা শূন্য বসিয়ে ভাগ করলে তার একভাগ) ব্রম্হান্ডের ব্যাস ছিলো 13cm ব্যাসযুক্ত মার্বেলের সমান। আর তাপমাত্রা ছিলো 18এর পর 26টা শূন্য °F। 1picosec পর এই ব্যাস দাঁড়ালো 620000 মাইল। কিন্তু তখনও অনু পরমানু কিছুরই অস্তিত্ব ছিলো না! অর্থাৎ আধুনিক পদার্থবিদ্যার কোনো সূত্র সেখানে প্রযোজ্য নয়। সেই শিশু ইউনিভার্স তখন চূড়ান্তরকম অস্থির শুধু শক্তির বিচরনক্ষেত্র। ঠিক তারপরই সৃষ্টি হলো পদার্থ বা ম্যাটার। শক্তি এবং পদার্থ পারস্পরিক রূপান্তরযোগ্য সেটা আইনস্টাইনের E=mC2 সূত্রে আমরা পেয়ে থাকি। এই সূত্র যেমন পদার্থ থেকে শক্তির সৃষ্টি ব্যাখ্যা করে তেমনি শক্তি থেকে পদার্থের উদ্ভব ও ব্খ্যা করতে পারে। কিন্তু সমস্যা দাঁড়ালো ম্যাটারের সাথে এক্ষেত্রে তৈরী হলো অ্যান্টিম্যাটার, যা ম্যাটারের অস্তিত্ত্বকে সংকটে ফেলে দিলো। ম্যাটারের সাথে অ্যান্টিম্যাটারের সংঘর্ষে একে অপরকে annihilate করে শক্তি নির্গত হতে লাগলো আর আমাদের শিশু ইউনিভার্সের অস্তিত্ত্ব সংকটে পড়ে গেলো। এরকম চলতে থাকলে তো সৃষ্টি হওয়া পদার্থ সব পুনরায় শক্তিতে রূপান্তরিত হবে। এখানেই পরিত্রাতা হয়ে গেলো একটা মিস্ ম্যাচ। কি সেটা? প্রতি 100মিলিয়ন অ্যান্টিম্যাটার প্রতি 100মিলিয়ন ও একটি ম্যাটার পার্টিকল তৈরী হলো। অর্থাৎ 200টি ম্যাটার ও অ্যান্টিম্যাটার প্রতি 1টি ম্যাটার পার্টিকল অতিরিক্ত থেকে গেলো। এটাই হয়তো পরবর্তীতে গ্রহ নক্ষত্র গ্যালাক্সি তৈরীর টার্নিং পয়েন্ট হয়ে গেলো। SERN এর relativistic heavy ion collider পরীক্ষায় কিন্তু বিজ্ঞানীরা এই ম্যাটার অ্যান্টি ম্যাটার সিস্টেমের উপস্থিতির প্রমান পেয়েছেন। তারা বিগব্যাং এর পরবর্তী 1সেকেন্ডের 1কোটি ভাগের একভাগ মূহূর্তের এই সংঘর্ষ পরবর্তী অবস্থা বুঝতে পেরেছেন।

এভাবে চলতে চলতে বিগব্যাং পরবর্তী শিশু ব্রম্হান্ড বিগব্যাং এর 1সেকেন্ডের 10লক্ষ ভাগের একভাগ মুহূর্তে 600কোটি মাইল বিস্তার লাভ করে। এভাবে ক্রমাগত বিস্তারলাভের সাথে সাথে ব্রম্হান্ড যতো বিস্তারলাভ করতে থাকলো ততোই তার তাপমাত্রা হারিয়ে ম্যাটার পার্টিকল এর প্রোটন ও নিউট্রন একত্র হতে থাকে। যা পরমানুর নিউক্লিয়াস তৈরী করলো। প্রথম হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম নিউক্লিয়াস গঠিত হলো। এভাবে কেটে গেলো আরও 3লক্ষ 80হাডার বছর, মহাবিশ্বের তাপমাত্রা তখন কমে দাঁড়িয়েছে 4940°F তার বিস্তার 86মিলিয়ন আলোকবর্ষ। চারিদিকে ছুটোছুটি করা ইলেক্ট্রনগুলি এবার নিউক্লিয়াসের চতুর্দিকে ঘুরতে শুরু করলো, অর্থাৎ গঠিত হলো পরমানু। শুরু হলো পদার্থ গ্রহ নক্ষত্র গ্যালাক্সির ক্রমকাশ।

পুরোনো অ্যান্টেনা ওয়ালা রেডিওর কথা মনে আছে? একটা নব থাকতো যেটা ঘুরিয়ে সেন্টার পরিবর্তন করার সময় একধরনের বিরক্তিকর শব্দ মনে পড়ে? বিজ্ঞানীদের মতে ওই শব্দের মধ্যে কিছু পরিমান ব্রম্হান্ড সৃষ্টির সময়কার কিছু রেডিও তরঙ্গ মিশে থাকতো। ভাবুন কতো সাধারন জিনিষে কি এক অসাধারন প্রাপ্তি!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here