নির্মলকুমার সাহা
লকডাউনের আগে থেকেই ঘরে আটকে পড়েছিল। সেটা চোটের কারণে। চিকিৎসা চলছিল ডাঃ মানবেন্দ্র ভট্টাচার্যের তত্ত্বাবধানে। সুস্থ হয়ে উঠে এতদিন কোর্টে নেমে পড়ার কথা। দেশে নয়, এখন থাকার কথা ছিল থাইল্যান্ডে, জুনিয়র আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় খেলার জন্য। কিন্তু করোনায় সব হিসেব, সব সূচি ওলোটপালোট করে দিয়েছে। ব্যাডমিন্টন কোর্টে এখনও নামতে পারেনি অঙ্কিত মণ্ডল। আরও অনেকের মতো গৃহবন্দী হয়ে পড়েছে। বাবা জগন্নাথ মণ্ডল সল্টলেকের সাইয়ে চাকরি করেন। থাকেন ওখানেই সাইয়ের কোয়ার্টার্সে। হায়দরাবাদের গোপীচাঁদ ব্যাডমিন্টন অ্যাকাডেমিতে নয়, অঙ্কিত এখন মা-বাবার সঙ্গে আছে ওই কোয়ার্টার্সেই।
আসলে লকডাউনের অনেক আগেই গত ডিসেম্বরে হায়দরাবাদ থেকে চলে এসেছে অঙ্কিত। ইন্দোনেশিয়ায় একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় খেলতে গিয়ে সামান্য চোট পেয়েছিল। গোপীচাঁদ কিছুদিন বিশ্রাম নিতে বলেছিলেন। সুস্থ হয়ে জানুয়ারিতে জলপাইগুড়িতে জুনিয়র রাজ্য র্যাঙ্কিং প্রতিযোগিতায় খেলে। সেখানে অঙ্কিত চারটি পদকও জেতে। অনূর্ধ্ব ১৭ সিঙ্গলসে চ্যাম্পিয়ন, অনূর্ধ্ব ১৭ ও অনূর্ধ্ব ১৯ দুই বিভাগেই মিক্সড ডাবলসে রানার্স, অনূর্ধ্ব ১৯ সিঙ্গলসে তৃতীয়। তারপর আরও কিছুদিন বিশ্রাম ও চিকিৎসার জন্য কলকাতায় থেকে যেতে হয়। এ পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই চলছিল। আবার যখন হায়দরাবাদে ফেরার জন্য তৈরি হচ্ছে, তখনই করোনা-আতঙ্ক। শুরু হয়ে যায় লকডাউন। আর আর হায়দরাবাদ যাওয়া হয়ে ওঠেনি। কিছুদিন পর থেকে শুরু হয় অন্যরকম প্রস্তুতি। অনলাইন অনুশীলন। যেটা এখন প্রায় সব খেলাতেই চলছে।
প্রতিদিন সকালে ৬ টা থেকে সাড়ে সাতটা পর্যন্ত গোপীচাঁদ অনলাইনে কোচিং করাচ্ছেন। হায়দরাবাদ থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছেন কোচ। এখানে সেই মতো চলছে ছাত্রের অনুশীলন। ১৪ পেরিয়ে ১৫-য় পা রাখা অঙ্কিত বলল, ‘এটা এক নতুন অভিজ্ঞতা। স্যার ওখান থেকে নির্দেশ দিচ্ছেন। সেই মতো আমি প্র্যাকটিস করছি। সবাই তাই করছে। প্রথম দিকে একটু সমস্যা হচ্ছিল। এখন মানিয়ে নিয়েছি।’ সামনে কোনও প্রতিপক্ষ নেই। র্যাকেট দিয়ে শট নিচ্ছে ঘরের দেওয়ালে। সার্ভিস করছে ঘরের দেওয়ালকেই প্রতিপক্ষ ভেবে। এভাবেই চলছে। বিকেলের অনুশীলন চারটে থেকে আড়াই-তিন ঘণ্টা। তখন অবশ্য হায়দরাবাদ থেকে গোপীচাঁদ নন, নির্দেশ দিচ্ছেন অ্যাকাডেমির অন্য কোনও কোচ। এছাড়াও রয়েছে ফিজিক্যাল ট্রেনিং। সেটাও চলছে কোচেদের নির্দেশ মতোই। লকডাউন কিছুটা শিথিল হওয়ার পর মঝেমধ্যে একাএকা দৌড়চ্ছে সামনের রাস্তায়।
এভাবে অনুশীলন চললেও কোর্টে নামার জন্য মন ছটফট করছে অঙ্কিতের। টুর্নামেন্টে খেলার জন্য যা খুবই জরুরি। কবে আবার দেশে বা বিদেশে প্রতিযোগিতায় খেলতে নামবে, তা এখনও জানে না। ডিসেম্বরে জাতীয় প্রতিযোগিতা হবে কিনা, তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা। এমনিতেই সামনের বছরের গোড়ায় খেলাধুলোর কিছুটা ক্ষতি হবে। কারণ বসতে হবে মাধ্যমিক পরীক্ষায়। তাই অনুশীলনের মাঝে সেরে ফেলতে হচ্ছে লেখাপড়াও। তারও অনেকটা অনলাইনেই। অঙ্কিত চায়, তাড়াতাড়ি করোনা সমস্যা মিটে আবার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরুক খেলাধুলো। পরীক্ষায় বসার আগেই যাতে কয়েকটা টুর্নামেন্টে খেলে ফেলতে পারে। নিজের লক্ষ্যপূরণের পথে আরও কিছুটা এগিয়ে যেতে পারে।