পাতিয়ালায় একবেলা অনুশীলন, মোবাইলেই সময় কাটছে লিলির

0
90

নির্মলকুমার সাহা

ত্রিবেনীর শিবপুর গান্ধী কলোনির বাড়ি ছেড়ে মেয়ে সল্টলেকে সাই হস্টেলে মাসের পর মাস থেকেছেন। জাতীয় শিবির কিংবা বাংলা বা দেশের বাইরে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে যাওয়ার জন্য কখনও দেড়-‌দু’‌মাস মেয়েকে রাজ্যের বাইরে থাকতে হয়েছে। কিন্তু তাতে মা-‌মেয়ের এত বেশি দিনের ‘‌বিচ্ছেদ’‌ কখনও ঘটেনি। সাই হস্টেলে যখন মেয়ে থাকতেন, ত্রিবেনীর বাড়ি থেকে মা চলে আসতেন সল্টলেকে। হাতের ব্যাগে থাকত মেয়ের জন্য বাড়ি থেকে রান্না করে আনা খাবার। কিন্তু এখন?‌ লকডাউনের জন্য বাংলার নামী অ্যাথলিট লিলি দাস ফেব্রুয়ারি থেকে আটকে আছেন পাতিয়ালায় জাতীয় শিবিরে। আর লিলির মা সুমিত্রা দাস বন্দী ত্রিবেনীর বাড়িতে। ফলে প্রায় ৬ মাস মা-‌মেয়ের দেখা হয়নি। ফোনে প্রতিদিনই দু’‌তিন বার মেয়ের সঙ্গে কথা বলেন মা। কিন্তু সেটা যেন দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো। বাস্তবে দু’‌জনেরই মন খারাপ।
পাতিয়ালা থেকে ফোনে দেশের অন্যতম সেরা মাঝারি পাল্লার রানার লিলি বললেন, ‘‌মন একেবারে ভালো নেই। ফেব্রুয়ারিতে চীনে যাওয়ার জন্য সবাই তৈরি হচ্ছিলাম, তখনই করোনার জন্য বাতিল হয়ে গেল সফর। ক্যাম্প চালু থাকায় আমাদের পাতিয়ালাতেই থেকে যেতে হল। তখন তো আমাদের দেশের অবস্থা এতটা খারাপ ছিল না। কিন্তু হঠাৎ লকডাউন শুরু হওয়ায় আমরা আটকে গেলাম। জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রথম প্রায় তিনমাস তো ভীষণ খারাপ অবস্থায় ছিলাম। এখন তাও সকালে একবার মাঠে যেতে পারছি। তখন সতর্কতার জন্য তাও সম্ভব হচ্ছিল না। কতক্ষণ আর একাএকা ঘরে বসে থাকতে ভালো লাগে!‌’‌ পাতিয়ালার হস্টেলে আগে এক ঘরে দু’‌জন করে থাকতেন। সতর্কতার জন্য সাইয়ের পক্ষ থেকে রাতারাতি এক ঘরে একজন থাকার ব্যবস্থা করা হয়। নিজের ঘর থেকে অন্য ঘরে গিয়ে আড্ডা দেওয়া, গল্প করাও যাবে না। ডাইনিং হলে গিয়ে খাওয়া ছাড়া আর ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না, এরকমই নির্দেশ ছিল। এখন ওঁরা অবশ্য সকালে মাঠে যেতে পারছেন অনুশীলনের জন্য। তবে সেখানেও সবরকম বিধি মেনে চলতে হচ্ছে। সোস্যাল ডিসট্যান্সিং বজায় রাখতে হচ্ছে। অনুশীলনে লিলিরা অবশ্য কোচ জে এস ভাটিয়াকে পাচ্ছেন না। লিলি বললেন, ‘‌ভাটিয়া স্যারের অনেক বয়স হয়েছে। তাই লকডাউনে একটু ছাড় দেওয়া শুরু হওয়ার পরই স্যার লখনৌর বাড়িতে চলে গেছেন। এখানে থাকার ঝুঁকি নেননি।’‌ অনুশীলনে তাই অন্য কোচদের পরামর্শ নিচ্ছেন। আর বিকেলে?‌ লিলি জানালেন, ‌ঘরের মধ্যেই ফিজিক্যাল ট্রেনিং করছেন।‌ কীভাবে সময় কাটছে?‌ লিলি বললেন, ‘‌মোবাইলে মুভি দেখছি। কার্টুন দেখছি। কিন্তু কত আর দেখব!‌ মা-‌র সঙ্গে ফোনে দিনে দু-‌তিনবার কথা বলছি। এভাবেই চলছে। বলতে পারেন, হাঁপিয়ে উঠেছি। এরকম অবস্থায় আগে কখনও পড়তে হয়নি। একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা‌।’‌
ত্রিবেনীর বাড়ি থেকে ফোনে লিলির মা সুমিত্রা দাস বললেন, ‘‌কতদিন মেয়েটা বাড়ির বাইরে!‌ আর ভালো লাগছে না। আগে কখনও টানা এতদিন বাইরে থাকেনি। সল্টলেকে সাইয়ে যখন থাকত, মাঝেমধ্যেই দেখতে যেতাম। পাতিয়ালায় যাওয়ারও উপায় নেই। আমার মনটাও পড়ে আছে পাতিয়ালায়। তাই সকাল, দুপুর, রাত—বারবার ওকে পোন করছি।’‌
কবে আবার ট্র‌্যাকে লড়াইয়ে নামতে পারবেন, লিলি জানেন না। বললেন, ‘‌সবারই বছরটা জলে গেল। সব যেন আবার নতুন করে সব শুরু করতে হবে!‌’‌

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here