নির্মলকুমার সাহা
যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে। এটা প্রচলিত প্রবাদ। বাংলার সম্ভাবনাময়ী টেবিল টেনিস খেলোয়াড় অনুষ্কা বসাক সম্পর্কে ওই প্রবাদটা একটু বদল করে বলা যায়, যে খেলে সে লেখাপড়াও করে। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে সি বি এস ই-র দ্বাদশ শ্রেনির ফাইনাল পরীক্ষার ফল। ৮৬.২ শতাংশ নম্বর পেয়েছে অনুষ্কা।
কিশলয় বসাক বাংলার নামী প্রাক্তন টেবিল টেনিস খেলোয়াড়। মিনু ধাওয়ান পাঞ্জাবের প্রাক্তন টেবিল টেনিস তারকা। এই দুই আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় পরবর্তী পর্বে স্বামী-স্ত্রী। ওঁদের কন্যা অনুষ্কা। পাঞ্জাবের একটি গ্রামের নাম সংসারপুর। সারা বিশ্ব যাকে চেনে ‘হকি গ্রাম’ হিসেবে। যে গ্রামের ছেলেমেয়েরা যেন জন্ম নেয় হকি স্টিক হাতে নিয়েই। সেরকমই কলকাতার নারকেলডাঙার একটি অংশ। যাকে অনায়াসে বলা যায়, ‘টেবিল টেনিস পাড়া’। ওখানকার ছেলেমেয়েদের জন্ম যেন টেবিল টেনিস ব্যাট হাতেই। ওটাই কিশলয়ের পাড়া। যে পাড়ার ঘরে ঘরে টেবিল টেনিস খেলোয়াড়। রাজ্য চ্যাম্পিয়ন, জাতীয় চ্যাম্পিয়ন, অলিম্পিয়ান, অর্জুন— সবই পাবেন ওই পাড়ায়। সুতরাং কিশলয়-মিনুর মেয়ের টেবিল টেনিসে আসার মধ্যে আলাদা কোনও গল্প বা ঘটনা নেই। ওঠাই ছিল স্বাভাবিক।
এবং স্বাভাবিকভাবেই নারকেলডাঙা সাধারণ সমিতিতে ঢুকে পড়া। আর ওখানে তো আছেনই এক এবং অদ্বিতীয় জয়ন্ত পুশিলাল। তাঁর কাছেই টেবিল টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার শুরু অনুষ্কার। যা এখনও চলছে। ২০১৭ সালে সাব জুনিয়র (অনূর্ধ্ব ১৭) রাজ্য প্রতিযোগিতায় সিঙ্গলসে তৃতীয় স্থান পায় অনুষ্কা। সেবারই গোয়ায় বাংলার হয়ে খেলেছে সাব জুনিয়র জাতীয় প্রতিযোগিতায়। দলগত প্রতিযোগিতায় বাংলা জিতেছিল রুপো। বাংলার হয়ে আরও একটি রুপোর পদক জিতেছে গত বছর (২০১৯), জুনিয়র ন্যাশনালে। এটাও দলগত বিভাগে। মাঝে ২০১৮ সালে রাজ্য প্রতিযোগিতায় জুনিয়র বিভাগের সিঙ্গলসে রানার-আপ।
শুরুতে যা বলেছিলাম, অনুষ্কা খেলে লেখাপড়াও করে। খেলার জন্য ওর লেখাপড়ার ক্ষতি হয়নি। আবার লেখাপড়ার জন্য ক্ষতি হয়নি খেলারও। ভারতীয় বিদ্যা ভবনের ছাত্রী অনুষ্কা দ্বাদশ শ্রেণির ফাইনাল পরীক্ষায় পেয়েছে ৮৬.২ শতাংশ নম্বর। ৫০০-তে ৪৩১। বিষয় ভিত্তিক প্রাপ্ত নম্বর: ইংরেজি ৯১, ফিজিক্যাল এডুকেশন ৯৭, হিন্দি ৮৬, বিজনেস স্টাডি ৮৬ এবং ইকনমিক্স ৭১। এছাড়া অ্যাকাউন্টেন্সিতে ৬০।
এবার ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটিতে ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে পড়বে অনুষ্কা।