মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে লকডাউনের জন্য ক্লাব বন্ধ। যেতে পারছে না অনুশীলনে। কিন্তু এতদিন হাত-পা গুটিয়ে ঘরে বসে থাকলে খেলাটাই তো ভুলে যেতে হবে। তাই অনুশীলনের জন্য বারাসতের বিবেকানন্দ সরনির বাড়ির সামনের এক চিলতে জমিই এখন ভরসা বাংলার প্রতিভাময়ী ভলিবলার অনুষ্কা মান্নার। ওখানেই ফিজিক্যাল ট্রেনিং করছে। একসময় অল্পস্বল্প ভলিবল খেলেছেন ওর মা অঞ্জনা মান্না। ফিজিক্যাল ট্রেনিংয়ের পর মেয়ের সঙ্গে মা-ও হাতে তুলে নিচ্ছেন ভলিবল। ওই ছোট উঠোনেই মা-কে নিয়ে অনুশীলন সেরে ফেলছে সদ্য মাধ্যমিক পাশ করা অনুষ্কা।
পরপর দু’বার মিনি জাতীয় ভলিবলে চ্যাম্পিয়ন বাংলা দলের হয়ে খেলেছে বারাসত অ্যাকাডেমি ফর স্পোর্টস অ্যান্ড গেমসের শিক্ষার্থী অনুষ্কা। ২০১৬ সালে মধ্যপ্রদেশে, ২০১৭ সালে (প্রতিযোগিতা হয়েছিল ২০১৮-র গোড়ায়) মিজোরামে। তার আগে ২০১৫ সালে তেলেঙ্গানায় জাতীয় স্কুল ভলিবল প্রতিযোগিতায় (অনূর্ধ্ব ১৪) বাংলার প্রতিনিধিত্ব করেছে। বাংলার স্কুল দল সেবার সেমিফাইনালিস্ট। অনুষ্কা জানাল, এবার সাব-জুনিয়র বাংলা দল গড়ার ট্রায়ালে ডাক পেয়েছিল। করোনা-আতঙ্কে তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ওই ট্রায়াল, প্রতিযোগিতা কবে হবে, কিংবা আদৌ হবে কিনা, কিছুই জানে না অনুষ্কা। কবে যেতে পারবে শেঠপুকুরে অ্যাকাডেমির কোর্টে কমল অধিকারী, শান্তনু অধিকারীদের কাছে ট্রেনিং নিতে, সেটাও অজানা। অনুষ্কা বলল, ‘বাড়িতে প্র্যাকটিস করে যতটা ফিট থাকা যায় সেই চেষ্টাই করছি।’
খেলাধুলোর মতো সমস্যা দেখা দিয়েছে সংসারেও। সেটা আর্থিক সমস্যা। অনুষ্কার বাবা অনুপ মান্না গাড়ি সারানোর কাজ করেন। লকডাউনের শুরু থেকেই সেই কাজ বন্ধ। মাঝে লকডাউন শিথিল হওয়ায় কাজ একটু চালু হলেও এখন তো বারাসতের অবস্থা ভয়ঙ্কর। ওর মা বারাসতে এক দোকানে বিক্রেতার কাজ করেন। সেই কাজও কয়েক মাস ধরেই বন্ধ। এই মুহূর্তে পরিবারে আয় বলতে কিছুই নেই। অনুষ্কার মা বলছিলেন, ‘কবে ঠিকমতো কাজকর্ম শুরু হবে, জানি না! এখন সংসারের ভরসা শুধু রেশনের ফ্রি চাল।’