সন্তু ধর
বরফের চাদরে মোরা আর্টিকের মূল আকর্ষণ দুধ সাদা মেরুভল্লুক। কিন্তু আপামর মানুষ সহ জীববিজ্ঞানীদের পছন্দের এই জন্তুটিই দেখতে চলছে তার শেষ শতাব্দী। কেনো? কী এমন কারণ এর পেছনে? জেনে নেব।
সম্প্রতি টরন্টো স্কার্বরো ইউনিভার্সিটির এক নতুন গবেষণা জানাচ্ছে, বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে মেরু ভালুক বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এবং তা অতি দ্রুত হারে। তাদের অনুমান শতাব্দীর শেষদিকে বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে আর্টিকের সমুদ্রের বরফ সঙ্কুচিত হয়ে পরবে, আর যার কারণেই এই পৃথিবী থেকে সম্পুর্নভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাবে মেরুভল্লুক।
এই প্রসঙ্গে টরন্টো স্কার্বরো ইউনিভার্সিটির গবেষক এবং গবেষণার শীর্ষস্থানীয় পিটার কে মোলনার, বলেছেন- “মেরু ভালুকের প্রায় 19 টি উপ-জনসংখ্যা মুছে যাবে। কারণ সমুদ্রের বরফের ক্ষয়ক্ষতিতে তাদের জমি এবং তাদের খাদ্য সরবরাহ সব বন্ধ হয়ে যাবে”। তাঁর এই বক্তব্য এই সোমবার গ্লোবাল ক্লাইমেট চেঞ্জ ও নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত হয়েছে।
পিটার কে মোলনারের গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দীর্ঘকালীন উপবাস ছাড়াও শাবকের সঠিক দেখাশোনার অভাব জনিত দুর্বলতা মেরু ভাল্লুকের বংশবৃদ্ধি এবং বেঁচে থাকা এই দুই সম্ভাবনাকেই দ্রুত হারে কমিয়ে দিচ্ছে।
ডাঃ মোলনার এও বলেছেন যে ” উচ্চ আর্কটিক ছাড়া পৃথিবীর যে কোনও জায়গায় মেরু ভালুক বেঁচে থাকতেও পারে তবে সেটি একটি মাত্র ছোট উপ-জনসংখ্যার মেরুভল্লুক হিসেবে। তবে সে সম্ভাবনাও খুব ক্ষীণ।
এই সমীক্ষায় আরও দেখা গিয়েছে যে, এই মূহুর্তে আর্টিকে প্রায় 25,000 মেরু ভল্লুক রয়েছে। যারা তাদের মূল বাসস্থান হিসেবে এই সমুদ্রের বরফের উপরই একমাত্র নির্ভরশীল। যেখানে তারা বরফের গর্ত থেকে বেরিয়ে আসে শুধু সীল শিকার করার জন্যে।
ডাঃ মোলনারের নিরীক্ষণ অনুযায়ী এই ভল্লুকের খাবার সংগ্রহ করার জন্য সমুদ্রের বরফের প্রয়োজন 100% কিন্তু এই মেরু ভল্লুকের জনসংখ্যা বজায় রাখার জন্য আর্টিকের জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার নেই।
গবেষকরা এও জানিয়েছেন যে সাম্প্রতিক দশকগুলিতে, এই আর্কটিক অঞ্চলটি দ্রুত উষ্ণ হয়েছে এবং গ্রীষ্মে বরফের প্রসারণের পরিমাণ 1981-2010 সালের গড় পরিমানের তুলনায় প্রায় 13 শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
ডাঃ মোলনার এবং তার সহকর্মীরা মেরু ভালুকের শক্তির প্রয়োজনীয়তা এবং বরফ-মুক্ত দিনগুলির জলবায়ু-মডেল অনুমানের 2100 শতক পর্যন্ত গণনা করে দেখেছ্ন যে 2100 সালে এই প্রাণী গুলিকে তাদের ক্ষমতার থেকেও দীর্ঘতর উপবাস করতে বাধ্য হবে যা অচিরেই তাদের বুলুপ্তির পথে ঠেলে দেবে।
এই সমীক্ষা থেকে প্রাপ্ত গবেষণা এও প্রমাণ করেছে যে 2040 সালে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ শিখরে পৌঁছবে এবং তারপরে তা হ্রাস পেতে শুরু করলেও মেরু ভালুকের উপ-জনসংখ্যার অনেকগুলি ততক্ষণে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
ডাঃ মোলনারের মতে এই সময়ে শক্তিক্ষয় করে শুধুমাত্র ভালুককে কেবল দীর্ঘ সময়ের জন্য উপোস করতে হবে না বরং পুনরায় শক্তি জমা করার জন্য তাদের আরও কঠিন সময় কাটাতে হবে যেটাও বেশ ভয়ংকর অভিজ্ঞতা।
ডক্টর মোলার এবং তার দলের করা এই সমীক্ষা একটি সচেতনতা সূচক, যা সত্যি ই আমাদের ভাবতে বাধ্য করছে যে এই পৃথিবী কী শুধুই মানুষের নাকি তথাকথিত সভ্য আগ্রাসনণে কেড়ে নেওয়া অবলা প্রাণগুলির যাদেরও এই পৃথিবীর ওপর দাবি মানুষেরই সমতুল্য। দেখা যাক, সময় ই এর উত্তর দেবে।