দেবারুণ রায়
মোক্ষম দাওয়াই দিলেন মমতা। একুশের ভার্চুয়াল সমাবেশের মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিজেপির রাজ্যে ভার্চুয়াল সরকারের স্বপ্ন ভঙ্গ করতে বাংলার আত্মসম্মানের ইস্যু লক্ষতুলে দিলেন আহত বাঘিনী। এই “গুজরাতি অস্মিতার” তাস খেলেই গুজরাতে বিজেপির শাসন প্রলম্বিত করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। একুশে জুলাইয়ের শহীদ দিবসের সঙ্গে একুশে
ফেব্রুয়ারির ভাষা শহীদদের স্মৃতিকেও মিলিয়ে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আহ্বান, একুশের ভোটে বিজেপির জামানত জব্দ করার। তারপরই ব্রহ্মাস্ত্র : গুজরাত থেকে বাংলা চলবেনা। একে একে সব রাজ্য শাসন করা হবে গুজরাত থেকে ? বাংলা শাসন করবে বাংলার লোকেরাই। এক্ষেত্রে তিনি একটা স্পষ্ট বার্তা দিতে চান। কংগ্রেস ও বামদের নিয়মরক্ষার মত আক্রমণ করে মূল লক্ষ্য করেন বিজেপিকে। কারণ, লোকসভায় গত ভোটে তাদের জেতা ১৮টি আসন। লক্ষ্যণীয় হল, যিনি তাঁকে প্রতিদিন আক্রমণ না করে কোনও কাজ করেন না সেই দিলীপ ঘোষের নামই করেন নি মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, বাংলার রাজনীতিতেকোনওদিন তাঁদের দেখিনি। বহিরাগতদের দিয়ে বাংলা চালাবেন ? বাম ও কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ার রাস্তায় না গিয়ে ঐ দুই পক্ষেরই সমর্থনভুমিকে টানার বার্তা দেন। এই আহ্বান ও বিজেপিকে হারাতে বলা স্পষ্টতই মেরুকরণের জমি চষবে। এতে শাসক তৃণমূলের আসন সুনিশ্চিত হবে সন্দেহ নেই। সেইসঙ্গে ফায়দা হবে বিজেপিরও । মুছে যাওয়ার দশা হবে বাম-কংগ্রেস জোটের ।এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস ও সিপিএম নেতারা কিন্তু তৃণমূলকে দোষারোপ করতে ছাড়েন নি। তাঁদের অভিযোগ, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ বা গুজরাতে বিজেপির যে কার্যকলাপের কথা তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী, তার সঙ্গে বাংলায় তাদের আচরণের তফাত কোথায় ? এতো সেই দিল্লির কেজরিওয়াল। যিনি ভোটের আগে বিজেপি বিরোধী। আর ভোট পেরলেই অন্যরূপ ।তবে তাঁরা যাই বলুন, নিজেরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন, তাঁদের ইস্যু সবই হাতছাড়া। সামাজিক ন্যায়বিচার থেকে বেকারি, অর্থনৈতিক অধোগতি থেকে বেসরকারিকরণ, সবকটি জনমুখী ইস্যুই বাংলায় মমতার হাতে। যে নয়া অর্থনৈতিক নীতির বিরুদ্ধে গণ আন্দোলনের জোয়ার এনেছিল বামেরা। তার পরিণতি হয়েছিল কেন্দ্রে ১৯৯৬ ও ২০০৪, এই দুবার সরকারের পতন। সেই ইস্যু এখন তৃণমূলের হাতে । প্রচণ্ড জনমুখী । শাসক দলের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকর তির । এর পাশাপাশি বিজেপি শাসিত রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সঙ্গে বাংলার তুলনা রাজনীতিতে বিজেপিকে যতটা কোণঠাসা করবে ততটাই লাভ তৃণমূলের। এবং সবার ওপরে যে সত্য তা কখনওই তুচ্ছ করার নয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকল্প কোনও মুখ এই মুহূর্তে কোথায় ? বিজেপির কে কে আছেন ? যে যে নাম শোনা যায় তাঁদের কথা বাংলার কাকপক্ষী শোনেনি কস্মিনকালেও। সেসব নামে ভোট তো প্রশ্নাতীত, জনসভায় লোক জোটানোও অসম্ভব। রাজ্য বিজেপির সঙ্গে যাঁরা আছেন , তাঁদের দলই মুখ্যমন্ত্রীপদবাচ্য বলে মনে করে কী ? তবে বাম ও কংগ্রেসের নেতারা ইস্যু দান করেও ক্ষান্ত হননি। মুখ্যমন্ত্রীর মুখ এখনও তাঁদের অপ্রস্তুত করে রেখেছে। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর উজ্জ্বল ভাবমূর্তি তাঁর উত্তরসূরি নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিরাট সমস্যার । তারা নতুন কাউকেই সেভাবে তৈরি করতে পারেনি। যাকে দেখে মানুষ বিকল্প পথে হাঁটবে।অন্যদিকে কংগ্রেসে জনপ্রিয়তার বিষম বিপদ। তার দৃষ্টান্ত অধীর চৌধুরি। সারা দেশের মন জয় করতে পারলেও, দলের ভেতরে উপদলীয় ভাই ভাতিজাবাদীদের চক্ষুশূল ! এহেন চালচিত্রে তৃণমূলনেত্রীর পিচে দারুণ রান তোলায় মার নেই। কিন্তু রাতবেরাতে পিচ খুঁড়ছে যারা তারা কেন অধরা ? এই অধরা মাধুরীর হিল্লে হলেই ফাঁকা মাঠে গোল দিতে পারবে তৃণমূল। মমতাকে আগামী একুশের ফাঁকা মাঠে দেখার আশা অপূর্ণ থেকে যাবে দিলীপের। আগামী বছর একুশের বিশাল সভার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। দিলুবাবুর দিল কি বাত কী বলে ?