“রিভালবার!” -স্বরূপ চক্রবর্তী

0
49

রিভলবারে  হাত  লাগাতেই  উত্তেজনায় কেঁপে  উঠলো টিপিবাজ। ভালোবেসে সাইনবোর্ড -শিল্পী  বাবা এই -ই  নাম দিয়েছিলেন। টিপ্। রঙের ছোট ফুটকি। তখন বুঝতে পারেননি টিপিবাজ রিভলবেরবাজে পরিণত হবে.

রিভলবারের বলে নাক ঠেকিয়ে বারুদের গন্ধ পেলো টিপ্। কতদিন ছেড়েদিয়েছে এই সঙ্গীকে। প্রথম হাতে পাওয়া রিভলবারটা ৭৭ এর এক্ষণে দৌড়োতে গিয়ে হাত থেকে পরে গিয়েছিলো।. তোলার চান্স পায়নি। তুলতে গেলেই ফিনিশ।কারণ, উল্টোদিকে থেকে উড়ে আসা পুলিশের গুলি ওকে ঝাঁঝরা করে দিতো। আঃ  অপূর্ব গন্ধ! ওস্তাদ বলেছিলো, রিভলবারকে ভালোবাসলে, তোকেও এই ছফুটো লোহার মেশিন ভালোবাসবে।

ছেলেটা সেই পুলিশেই।

ভয় করে, বেশ ক’দিন. ভয়টা হার কাঁপানো শীতের মতো জাপ্টে ধরেছে। আসলে মৃত্যুভয়! ৭৭ এর এক্ষণে নিঃস্বার্থ ভাবে দলের জন্ন যান লড়িয়ে দিয়েছিলো টিপ্। প্রায় ১২ জন! এই রিভলবারে ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিলো। টিকি ছুতে পারেনি পুলিশপুলিশ। টিপ্ হাসলো মনেমনে। সিক্সশুটারের নল থেকে তীব্র, কঠিন একটাতেই নরম করে দিয়েছিলো ওদের দলের সেরা লোকটাকে। ধামাচাপা, এবং লুকিয়ে পড়া. সবটাই গা সওয়া  টিপবাজের। রাজনৈতিক দলের আশ্রয়ে থাকলে মায়ের ভালোবাসাও হেরে যায়. সাময়িক, নিশ্চিন্ত নিরাপদ। করতে উঠেছিল, বদলি ফ্যাতা। ১১০ টাকা নিয়েছিল। উকিলের প্রশ্নে, রিভলবার আমিআমি জীবনে দেখিনি, আর গুলি? দেখেন সাব, একলব্যের মতো আমার বুড়ো আঙুলটাই নাই. তার তো একহাতে আছিলো কত্তা। আমার দুইটাই নাই. তো গুলি বা করি কেমন করে, বাঁটে স্যার আঙ্গুল রাখি কোথায়? কেন আমায় ডাকলেন স্যার? কেস ডিসমিসড!

টিপ্ খুব হাসলো ভেতরে ভেতরে।  ফ্যাতা বহুবার কান্ডারি হয়ে লুকনো লড়াই খেলেছে। এখন দিনে কচি মুরগি, রাতে রোলের ব্যবসা। কাটে, বাঁটে একজন। একলব্য বসে বাণিজ্য সামলে। টিপের অব্যর্থ টিপ্ আর দুদ্ধর্ষ সাহস ওকে রাজনৈতিক দলের সম্পদ করেকরে দিয়েছিলো। তাদের অর্ডার, রাতে টিপ্। পরদিন খবরের কাগজে প্রথম পাতায় ছবি. টিপ্ দেখতো, পড়তো। হস্ত এমনি, এখন যেমন হাসছে। শেষটা, কনফ্রন্টেশন। মাসুদ! রগে ঠেকিয়ে টিপ্ দিয়েছিলো। বাওয়া একটু শব্দ বাইরে চিৎকার করেনি। ধোঁয়া, ঝাপসা মৃত্যু!

নিচে ছেলের গলার শব্দ পেল. মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করছে। রোজ এক ই বিষয়। ছোটবেলা থেকেই টিপের বিরোধিতা করে আসছে। স্কুলে, কলেজে ওকে বারবার অপদস্থ হতে হয়েছে বাবার টিপের কারণে। ব্রেনটা মায়ের মতো পেয়েছে, বাপের পরিচয় লুকিয়ে চাকরিটা পেয়েছে। টিপবাজের নির্মল সংসার। শুধু ওই ছেলেটা মাঝে মাঝেই বলে, বাবা , পাপের প্র্যায়শ্চিত্ত করতেই হবে তোমায়।

টিপ্ একদিন ছেলেকে ডেকে বললো, কোনটা পাপ, কোনটা পুন্য রে ছোড়া, খুব বোরো বোরো কথা শিখেছিস পুলিশের কাজ পেয়ে, তাই না! ছেলে বলেছিলো, সব জানি, ঘটিও  না বাবা। অন্যায়টা অন্যায় ই. টিপ্ চুপ করেছিল।

কয়েকদিন তাই রিভলবার হাত রাখতে ইচ্ছা করেছিল ছেলের বিরুদ্ধে। সোমাকে ডেকে একদিন বলেও দিলো। ওকে বলে দিয়ো।

আজ রিভলবারে হাত রেখে রাত্তিরে শুয়েছিল টিপ্। ছাড়েনি। ঝামেলা ছেলের সঙ্গে হয়েছিল চূড়ান্ত। গুলি কি আছে? স্ক্রল করলো টিপ্। ঘুম আসছে না. খ্যাররর শব্দ আওয়াজ করলো। শীত-ভয়ের শরীরে। নলতা রজার পশে ধরে মাসুদ কে মনে পড়লো। পাশের বাড়ির মাসুদের সদ্য বিবাহিত স্ত্রী গুমরে কেঁদেছিলো। শালা পাঙ্গা নেয়া! ঠুকে দেব রগে. রিভলবারটা বুকের ওপর পরে গেলো নিঃশব্দে। যত্নে।

পরদিন সন্ধ্যের সময় টিপের ছেলে ফিরছিলো  ধড়াচুড়ো পরে. মাসুদের স্ত্রী হাসছিলো, শুধু হাসছিলোই। 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here