সন্তু ধর
বাচ্চা বড় করে তোলার পথে রোজই কিছু না কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এরকম ই একটি সমস্যার নাম ‘কুচো কৃমি’। যা বাচ্চার স্বাভাবিক বৃদ্ধির পথে বড় বাধা। আজ এই প্রতিবেদনে আমরা জেনে নেব এই সমস্যার মূল কারণ ও তার কিছু স্বাভাবিক প্রতিকার।
‘কুচো কৃমি’ যাকে ইংরেজিতে আমরা রাউন্ড ওয়ার্ম নামে চিনি। এটি প্রায়শই শিশুদের পেটেব্যথা, বমিবমি ভাব, খাদ্যে অরুচি, পায়ুদ্বারে চুলকানি ইত্যাদি লক্ষণ তৈরি করে থাকে।
যদি শিশুর এ ধরণের লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে বুঝতে হবে শিশুটি কুচো কৃমিতে আক্রান্ত। এধরণের কৃমি সুতোর মত, ছোট, পাতলা এবং সাদা রঙের হয় আর সাধারণভাবে বাচ্চার মলের সাথে বাইরে বেরিয়ে আসে।
একটি ভুল ধারণা প্রচলিত যে মিষ্টি খেলে কৃমি হয়ে থাকে যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে মিষ্টি খাওয়ার সাথে কৃমি হওয়ার কোনো সম্পর্কই নেই।
এখন প্রশ্ন কোথা থেকে আসে এই কৃমি? আমাদের আশপাশে প্রকৃতিতে কৃমির ডিম ছড়িয়ে থাকে এটি একটি পরজীবী । যাকে বাঁচার জন্যে একটি জীবিত শরীরের প্রয়োজন হয়। জানলে অবাক হবেন যে সাধারণ মাটিতে বাচ্চা হিসু করার সময় সেই তরল প্রবাহ ধরে কৃমি বাচ্চার শরীরে প্রবেশ করতে পারে অনায়াসেই।
শিশু কৃমি আক্রান্ত হলে যা যা সমস্যা হয়ে থাকে:
কৃমিতে আক্রান্ত হলে শিশুর অনেক ধরণের সমস্যা হয়ে থাকে এই যেমন শারিরীক বিকাশের অভাব, অপুষ্টি, এমনকী কৃমি অন্ত্রে রক্তপাত ঘটিয়ে শিশুকে রক্তশূন্য করে ফেলতে পারে!
এটি অন্ত্রে পরিপাক ও শোষণে বাঁধার সৃষ্টি করে, যার ফলাফল ডায়রিয়া। ক্রমাগত ডায়রিয়া শিশুকে দুর্বল করে দেয় এবং শিশুর বিকাশ সঠিকভাবে হতে দেয় না।
শিশুদের কৃমি হওয়ার পেছনে যা যা কারণ:
১. অপরিচ্ছন্নতা। শিশুর বিশেষ করে ছোট্ট শিশুকে সঠিক ভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না রাখলে।
২. মায়ের দুধ দ্রুত ছাড়িয়ে নিলে। বিশেষ করে জন্মের ৬ মাসের মধ্যে।
৩. পাবলিক প্লেসের মাটিতে শিশু খালি পায়ে হাটলে বা খেলা ধুলা করলে পায়ের ও হাতের নখের ভেতরে কৃমির ডিম প্রবেশ করে। যা শিশুর স্বাভাবিক ব্যাবহারের কারণে মুখের থেকে অন্ত্রে পৌঁছায়।
৪. শিশু বিশেষ করে ৩-১০ বছরের শিশুরা খাওয়ার আগে ভাল করে হাত না ধুলে।
৫. শিশুকে নিয়মিত সাবান ছাড়া স্নান করালে।
৬. নিয়মিত শিশুর নখ না কাটলে বা নখের নিচে মাটি থাকলে সেখানেও কৃমির ডিম থাকতে পারে।
ওপরের দেওয়া একটি মাত্র কারণও শিশুর পেটে কৃমি তৈরি করতে পারে তাই জেনে নেওয়া যাক কৃমি থেকে বাচ্চাকে দূরে রাখতে কী কী করতে হবে:
(১) মায়ের দুধের কোনো বিকল্প নেই। তাই শিশু জন্মের পর থেকে ৬ মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধ ছাড়া অন্য কিছু দেওয়া যাবে না।
(২) পরিষ্কার পানীয় জলের বা স্বাভাবিক জলের ব্যবহার। পরিষ্কার ও নিরাপদ জল ব্যবহার করতে হবে। জল পান করা থেকে শুরু করে ধোয়া-মোছা, রান্নাবান্না, সবক্ষেত্রে পরিষ্কার ও নিরাপদ জল ব্যবহার করুন।
(৩) শিশুর খালি পায়ে হাঁটার অভ্যাস দূর করুন। শিশুকে চটি বা জুতো পড়ে হাঁটতে শেখান। একদম ছোট বাচ্চার ক্ষেত্রে মা কে খালি পায়ে হাঁটার অভ্যাস দূর করতে হবে। ঘরের এবং টয়লেটের জন্যে আলাদা চটি ব্যবহার করতে হবে।
(৪) শিশু কে ডাক্তারের পরামর্শ মত সাবান দিয়ে নিয়মিত স্নান করাতে হবে। কোথাও যেন কোনও ময়লা জমে না থাকে সেদিকে নজর দিতে হবে।
(৫) প্রতি ৩ মাস পরপর ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ও প্রস্তাবিত কৃমির ওষুধ খাওয়াতে হবে। সেই সাথে পরিবারের প্রত্যেক কেও কৃমির ওষুধ খেতে হবে। কেনোনা পরিবারের একজনের কৃমি হলে বাকিদেরও কৃমি হয়ে থাকে।
তবে মনে রাখবেন কৃমি একটি সাধারণ রোগ যা সচেতনতার দ্বারা এড়িয়ে যাওয়া সহজ। ওষুধ খাওয়ার আগে বা বাচ্চাকে দেওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।
মনে রাখবেন সুস্থ পরিবার মানে বাচ্চার জীবন সুস্থ ও নিরাপদ।