কালনা স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম আর গঙ্গায় সায়নীর প্রস্তুতি

0
114

‌নির্মলকুমার সাহা

জলের মেয়ের এই বছরটা জলেই গেল!‌ করোনার জেরে অনেকের জীবন থেকেই হারিয়ে গিয়েছে অনেক কিছু। ব্যতিক্রম নন ইংলিশ চ্যানেলজয়ী সায়নী দাসও। ‌এ বছরই ১৬ আগস্ট উড়ে যাওয়ার কথা ছিল হাওয়াইয়ের মলোকাই (‌Molokai) চ্যানেল পার হওয়ার জন্য। কর্তৃপক্ষের দেওয়া সময় অনুযায়ী সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সায়নীর মলোকাই চ্যানেল পার হওয়ার জন্য জলে নামার কথা ছিল। সেই মতো অনেক আগেই শুরু করে দিয়েছিলেন অনুশীলন, প্রস্তুতি। কিন্তু করোনা-‌আতঙ্কে হঠাৎই ছন্দপতন। লকডাউন শুরু হতেই অনুশীলন, প্রস্তুতি বন্ধ করে ঘরবন্দী হয়ে পড়া। বিশ্ব জুড়ে করোনা মহামারির জন্য চ্যানেল কর্তৃপক্ষও ওই সূচি বাতিল করে দিয়েছেন। চ্যানেল কর্তৃপক্ষ সায়নীকে জানিয়েছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সামনের বছর ওঁকে আবার সময় দেওয়া হবে। প্রায়োরিটি তালিকায় সায়নীর নাম থাকবে। সব মিলিয়ে একটা মন-‌খারাপ পর্ব চলছিল সায়নীর। লকডাউন কিছুটা শিথিল হতেই সরকারি নিয়ম মেনে নেমে পড়েছেন প্রস্তুতিতে।

লকডাউন শুরু হওয়া থেকে এখনও পর্যন্ত মা-‌বাবার সঙ্গে সায়নী আছেন কালনার বাড়িতেই। মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে বন্ধ ছিল অনুশীলন। বাড়ির ভেতর সামান্য ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়ামের মাধ্যমে নিজেকে ফিট রাখার চেষ্টা করেছেন। প্রায় তিন মাস পর এখন কিছুটা ‘‌মুক্ত’‌। কালনার বাড়ি থেকে ফোনে সায়নী বললেন, ‘‌বাড়িতে আর বসে থাকা যাচ্ছিল না!‌ লকডাউনের কড়াকড়ি কিছুটা কমতেই শুরু করেছি অনুশীলন। তবে সরকারের নির্দিষ্ট নিয়ম মেনেই। যেমন পুরসভার মাঠে দৌড়তে বা হাঁটতে যেতে পারছি না। কারণ ওখানে হয়ত সোস্যাল ডিসট্যান্সিং মানা সম্ভব হবে না। পাড়ার রাস্তাতেও একই সমস্যা। তাই আমি অনেক ভেবে হাঁটার জন্য একটা জায়গা বের করেছি। সেটা হল অম্বিকা কালনা স্টেশনের লম্বা প্ল্যাটফর্ম। এখন তো লোকাল ট্রেন চলাচল বন্ধ। তাই স্টেশন ফাঁকা। কোনও লোক নেই। ওই ফাঁকা স্টেশনেই আমি দীর্ঘ সময় টানা হাঁটছি।’‌ সায়নী আর যাচ্ছেন গঙ্গায়। প্রতিদিন সকালে এক ঘণ্টা সাঁতার কাটছেন একাএকাই। সায়নী বললেন, ‘‌পাওয়ার, এনডুরেন্স ঠিক রাখার জন্য জলে নামাটা খুব দরকার ছিল। এখন জলে নেমে কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছি।’‌ সাঁতার কাটার জন্য বাড়ি থেকে ১০ মিনিট সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছেন মহিষমর্দিনী তলা ঘাটে। তবে সোস্যাল ডিসট্যান্সিং মানার জন্য মূল ঘাট থেকে সাঁতার শুরু করছেন না। সায়নী জানালেন, ‘‌ওখানে বড্ড ভিড়। সোস্যাল ডিসট্যান্সিং মানা সমস্যা হতে পারে। তাই ঘাটের কিছুটা দূরের একটা জায়গা থেকে সাঁতার শুরু করছি। ‌এতে কোনও সমস্যা হচ্ছে না।’‌

২০১৭ ইংলিশ চ্যানেল, ২০১৮ রটনেস্ট চ্যানেল, ২০১৯ ক্যাটলিনা চ্যানেল পার হয়েছেন সায়নী। এবার আর কোনও চ্যানেল পার হওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সায়নী বললেন, ‘‌খারাপ তো লাগছেই। তবে কী আর করা যাবে!‌সবাইকেই এই পরিস্থিতি মেনে নিতে হচ্ছে। অলিম্পিকও তো এবার হল না। সামনের বছর হবে, এমন নিশ্চয়তাও নেই। কত ছেলেমেয়ের সারা জীবনের স্বপ্নই হয়ত শেষ হয়ে যাবে। তাদের অলিম্পিকে অংশ নেওয়াই হয়ত আর হবে না!‌’‌

সামনের বছর মলোকাই চ্যানেল পার হওয়ার সুযোগ পাবেন, এটা ভেবেই অনুশীলন শুরু করলেও আরও একটা বড় লক্ষ্য রয়েছে ওঁর সামনে। ২০২২ সালের শুরুতেই যাবেন নিউজিল্যান্ডের কুক প্রণালী পার হতে। ওঁর নাম নথিভুক্ত হয়ে গিয়েছে। কর্তৃপক্ষ পরে জানিয়ে দেবেন নির্দিষ্ট তারিখ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here