নির্মলকুমার সাহা
তাঁর এখন প্যারালিম্পিকের পদকের লক্ষ্যে বিদেশে শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার জেরে তিনি এখন উত্তরাখণ্ডের রুদ্রপুরের ইন্দিরা নগরে গৃহবন্দী। প্রবাসী বাঙালি প্যারা ব্যাডমিন্টন তারকা মনোজ সরকার অবশ্য মন খারাপের প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নিয়েছেন। ফোনে বললেন, ‘কী আর করা যাবে? এটা তো আমার একার সমস্যা নয়। কোনও না কোনওভাবে সবার ওপরই করোনার কমবেশি প্রভাব পড়েছে।’
এবার প্যারালিম্পিক হওয়ার কথা ছিল টোকিওয় ২৫ আগস্ট থেকে ৬ সেপ্টেম্বর। করোনার জেরে যা আপাতত হচ্ছে না। নতুন সূচি অনুযায়ী হতে পারে সামনের বছর ২৪ আগস্ট থেকে ৫ সেপ্টেম্বর। সেটাও অনেকটাই অনিশ্চিত। নতুন ওই সূচি অনুযায়ী না হলে একেবারে ২০২৪ সালে।
লকডাউনের শুরু থেকেই বাড়িতে আটকে রয়েছেন মনোজ। সরকারি নিয়ম মেনে দ্রোণা ব্যাডমিন্টন অ্যাকাডেমিতে (Drona Badminton Academy) অনুশীলনের জন্য যেতে পারছেন না। সাড়ে তিন মাসের বেশি কোর্টে নামতে পারেননি। এই সাড়ে তিন মাসে দেশে ও দেশের বাইরে কিছু টুর্নামেন্টে খেলার কথাও ছিল। যার মধ্যে ছিল জাতীয় প্রতিযোগিতাও। সবই বাতিল হয়ে গিয়েছে। মনোজ বললেন, ‘আরও কতদিন অনুশীলন, প্রতিযোগিতা থেকে দূরে থাকতে হবে, জানি না!’ বাড়িতে অবশ্য একেবারে বসে নেই মনোজ। বাড়ির মধ্যেই ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম, যোগাসন, শ্যাডো প্র্যাকটিস করছেন। বললেন, ‘শারীরির সক্ষমতা বজায় রাখার জন্য এগুলো আগে অ্যাকাডেমিতে করতাম। এখন বাড়িতে করছি। কিন্তু কোর্টে না নামা পর্যন্ত আসল প্র্যাকটিস হবে না। সবারই অনেক ক্ষতি হয়ে গেল।’
একবছর বয়সে পোলিওয় আক্রান্ত। সেই থেকে মনোজের ডান পায়ে জোর নেই। তখন সব কিছু ঠিকঠাক বোঝার বয়স নয়। একটু বয়স হওয়ার পর থেকেই অদম্য জেদ দেখা যায়। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে কিছু করে দেখাতে হবে। সেই জেদকে কাজে লাগিয়ে একের পর এক সাফল্য পেয়ে চলেছেন এই প্রবাসী বাঙালি। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় মনোজের জেতা পদকের সংখ্যা ৪২। যার মধ্যে সোনা ১৫ টি। রুপো ও ব্রোঞ্জ যথাক্রমে ১১ ও ১৬। এর মধ্যে রয়েছে প্যারা ব্যাডমিন্টনের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ৭ টি পদক। তিনটি সোনা ডাবলসের। যা জিতেছেন ২০১৩, ২০১৫ ও ২০১৯ সালে। সিঙ্গলসে জিতেছেন একটি রুপো (২০১৭) ও দু’টি ব্রোঞ্জ (২০১৫, ২০১৯)। ২০১৩ সালে জিতেছেন মিক্সড ডাবলসের ব্রোঞ্জ পদক। জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় জিতেছেন ২৪ টি পদক। সোনা ১৮, রুপো ৪, ব্রোঞ্জ ২। গত বছর পেয়েছেন অর্জুন পুরস্কারও। ডাবলসে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে এখন একনম্বরে। সিঙ্গলসে তিনে। এত কিছুর পরও মনোজের নেই প্যারালিম্পিকের পদক। থাকবে কী করে? এতদিন তো প্যারালিম্পিকে ব্যাডমিন্টন ছিলই না। এবারই প্রথম প্যারালিম্পিকের খেলার তালিকায় জায়গা পেয়েছে মনোজদের ব্যাডমিন্টন। মনোজ বললেন, ‘প্যারালিম্পিকের পদক চাই। তাই অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম। একবছর পিছিয়ে গেল। এটা একটা ধাক্কা তো বটেই। তাও যদি না হয়, ২০২৪ পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। লড়াইটা ছাড়ছি না। তখনই লড়তে হবে পদকের জন্য।’