নির্মলকুমার সাহা
ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়তে লড়তেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। মনিপুর থেকে দিল্লি গিয়েছিলেন ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য। সেখান থেকে আবার নিজের রাজ্যে ফিরতেই ধরা পড়ে করোনাভাইরাস তাঁর শরীরে ঢুকে পড়েছে। এ যেন ‘গোদের উপর বিষফোঁড়া’! করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জিতে আপাতত কিছুটা স্বস্তিতে ১৯৯৮-এর ব্যাঙ্কক এশিয়ান গেমসে সোনাজয়ী বক্সার ডিঙ্কো সিং। তবে লড়াই জারি রয়েছে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে। এখন আছেন হোম আইসোলেশনে। শুক্রবার দুপুরে মনিপুরের ইম্ফল থেকে ফোনে ডিঙ্কোর স্ত্রী বাবাই দেবী বললেন, ‘জোড়া ধাক্কায় অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে। এখন বাড়িতে পুরোপুরি বিশ্রামে রয়েছে। ডাক্তারের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলছি। আবার দিল্লি নিয়ে যেতে হবে।’
একসময়ের লড়াকু বক্সার ডিঙ্কো সিং। ওই সময়ে যাঁরা কাছ থেকে দেখেছেন, তাঁরা জানেন ওঁর মনের জোরের কথা। ওঁর স্ত্রী বাবাইও মনে করিয়ে দিলেন ডিঙ্কোর সেই ‘মনের জোর’। বললেন, ‘‘ও সবসময়ই বলে, ‘চিন্তা করার কিছু নেই। আমি সুস্থ হয়ে উঠব’। ডাক্তাররাও ওর মনের জোর দেখে ভরসা পাচ্ছেন। তবে ও করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় ভীষণ চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। আসলে কয়েকবছর ধরে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই চলছে। এর চিকিৎসা কোথায়, কীভাবে করব, অনেকটা বুঝে ফেলেছি। কিন্তু করোনা একেবারেই অপরিচিত। তাই ভীষণ উৎকণ্ঠায় ছিলাম।’’
২০১৭ সাল থেকে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত ডিঙ্কো লকডাউনের সময়ে প্রায় দেড় মাস চিকিৎসার জন্য দিল্লিতে ছিলেন। ওখান থেকে ২৩ মে ফেরেন ইম্ফলে। ফেরার পর নিয়ম মেনে ১৫ দিন কোয়ারান্টিনে থাকতে হয়। সেখানে থাকার সময়ই ৩০ মে প্রবল জ্বরের সঙ্গে আরও কিছু উপসর্গ দেখা দেয়। জানা গেল ওই সময় জন্ডিসেও আক্রান্ত হয়েছিলেন। কোভিড-১৯ টেস্টের পর রিপোর্ট আসে পজিটিভ। সেই থেকে ছিলেন হাসপাতালেই। একমাসে পাঁচবার টেস্টের রিপোর্ট সেই পজিটিভ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠেন। তারপর আবার টেস্ট। সেই টেস্টের রিপোর্ট নেগেটিভ হওয়ায় জুলাইয়ের শুরুতে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে ডিঙ্কোর পরিবারে। বাবাই বললেন, ‘অনেকদিন ধরেই তো ডিঙ্কোকে নিয়ে চিন্তায় আছি। ওই চিন্তাটা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছিল পরপর করোনা টেস্টের পজিটিভ রিপোর্ট। এখন কিছুটা চাপ কমেছে।’
বাবাই আরও জানালেন, মনিপুরের বক্সিংয়ের সবাই খুব সাহায্য করছেন। আলাদাভাবে বাবাই নাম বললেন মহিলাদের প্রাক্তন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন সারিতা দেবীর। বললেন, ‘ও সবসময় আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। ডাক্তার, সরকারের লোক, ফেডারেশনের কর্মকর্তা সবার সঙ্গেই চিকিৎসার ব্যাপারে যা কথা বলার সারিতা বলছে। অনেক দায়িত্ব একাই নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে।’
উল্লেখ্য ডিসেম্বর মাসেও রেডিয়েশন থেরাপির জন্য দিল্লির আই এল বি এস-এ (Institute of Liver and Biliary Sciences) ভর্তি ছিলেন। জানুয়ারিতে ইম্ফলে ফেরেন। লকডাউনের সময় এপ্রিলে শরীরের পরিস্থিতি ভীষণ খারাপ হয়ে পড়ায় আবার দিল্লি যাওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়। কিন্তু লকডাউনের জন্য তখন নানা সমস্যা। শেষ পর্যন্ত এয়ারফোর্সের বিশেষ বিমানে ডিঙ্কোকে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়। ফের ভর্তি হন আই এল বি এস-এ। বাবাই বললেন, ‘ডাক্তারদের সঙ্গে কথা হয়েছে। হোম আইসোলেশন পিরিয়ড আজ শেষ হল। এখন আবার দিল্লি যেতে হবে। যেভাবে করোনার প্রভাব বাড়ছে দিল্লি যাওয়া নিয়ে ভীষণ চিন্তায় আছি। দেখি দিল্লির ডাক্তাররা কবে যেতে বলেন!’