নির্মলকুমার সাহা
কলকাতার বেহালার এক কিশোরী এখন ফেরো আইল্যান্ডের (Faroe Islands) একনম্বর মহিলা ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়। গত বছর সিনিয়র জাতীয় চ্যাম্পিয়ন। এবছর এখনও জাতীয় প্রতিযোগিতা হয়নি। আর র্যাঙ্কিংয়ে গত বছর থেকে টানা একনম্বরেই রয়েছে কয়েকদিন আগে ১৬ পেরিয়ে ১৭-য় পা রাখা আধ্যা নন্দী (Adhya)। তার আগে বিভিন্ন বয়সভিত্তিক জাতীয় প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আধ্যার বাবা ভারতের প্রাক্তন ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় অরিত্র নন্দী। যিনি এখন ফেরো আইল্যান্ডের জাতীয় কোচ। গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে অরিত্রর হাত ধরেই এগোচ্ছে ফেরো আইল্যান্ডের ব্যাডমিন্টন। কোচ হিসেবে অরিত্র প্রথম ওখানে যান ২০০১ সালে। ছিলেন ২০০৪ পর্যন্ত। তারপর আবার যান ২০০৮ সালে। সেই থেকে টানা ওখানে আছেন জাতীয় কোচ হিসেবে। অরিত্র জানালেন, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সিনিয়র, জুনিয়র সব দলকেই দেখতে হয়। এখন পুরো দায়িত্বে রয়েছেন জুনিয়র দলের।
বাবার কাছে ওই ফেরো আইল্যান্ডেই ব্যাডমিন্টনে হাতেখড়ি আধ্যার। এখন অবশ্য বাবা ছাড়া অন্য কোচদের কাছেও কোচিং নেয়। সারা বছর ফেরো আইল্যান্ডে থাকেও না। ডেনমার্কের অঙ্গ ফেরো আইল্যান্ড। অলিম্পিকে ফেরো আইল্যান্ডের খেলোয়াড়দের অংশ নিতে হয় ডেনমার্কের হয়ে। অন্যান্য প্রতিযোগিতায় আলাদা ‘দেশ’ হিসেবেই খেলতে হয়। যেমন ফুটবল বিশ্বকাপেও ফেরো আইল্যান্ডের আলাদা দল অংশ নেয়। ডেনমার্কের ব্যাডমিন্টনের খ্যাতির কথা সবারই জানা। আধ্যা কোচিং নেওয়ার জন্য এখন বছরের অনেকটা সময় ডেনমার্কের আরহাসে (Aarhus) থাকে।
করোনার জন্য আরহাস থেকে মার্চ মাসের শুরুতেই বাবার কাছে ফিরে আসে আধ্যা। বাড়িতেই ছিল। ফেরো আইল্যান্ড জুনের পরই করোনামুক্ত। তবু সতর্কতা বজায় রাখতে হচ্ছে। অনুশীলনও করছে ওই সতর্কতা বজায় রেখেই। আগস্টে আবার চলে যাবে আরহাসে। গত বছর ইউরোপিয়ান সার্কিটে জুনিয়র বিভাগে তিনটি টুর্নামেন্টের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল আধ্যা। এবছর আরও ভালো ফলের আশায় ছিল। কিন্তু করোনার ধাক্কায় সবই অনেকটা পরিকল্পনাহীন হয়ে পড়েছে। তবে আবার ঠিকঠাক সব প্রতিযোগিতা শুরু হলেও যাতে ছন্দ ধরে রাখতে পারে তার জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখছে।
অরিত্রর ছেলে অরি শ্রীশ (Ari Srish) নন্দীও ব্যাডমিন্টন খেলে। বয়সে আধ্যার চেয়ে একবছরের বড়। জুনিয়র পর্যায়ে ওরও কিছু সাফল্য রয়েছে। কিন্তু গতবছর সামান্য অসুস্থ হয়ে পড়ায় ঠিক মতো খেলতে পারেনি। ফেরো আইল্যান্ডে এখন ওর র্যাঙ্কিং পাঁচ-ছয়ের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে।
প্রতিবছরই অন্তত একবার দেশে আসেন অরিত্র। এবার পাকাপাকি ফিরতে চাইছেন ভারতে। বললেন, ‘দেশেও অনেকে কোচিংয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন। ফিরলে ভালো কোনও অ্যাকাডেমি বা কোচিং সেন্টারে কাজের সুযোগ নিশ্চয়ই পেয়ে যাব। নিজে কোনও সেন্টারও খুলতে পারি।’ অরিত্র ফিরলেও ছেলেমেয়ে ওখানেই থাকবে। সেটা ব্যাডমিন্টন খেলার জন্যই। অরিত্র বললেন, ‘ওরা এখানে মানিয়ে নিয়েছে। এখনই আর দেশে ফিরবে না।’