করোনায় শুধু খেলাধুলো বন্ধ নয়, প্রচণ্ড আর্থিক সঙ্কটের মুখোমুখি বাংলার এক ঝাঁক খেলোয়াড়। এরপর আবার কয়েকটি জেলার বেশ কিছু খেলোয়াড়কে সামলাতে হচ্ছে আমফানের ধাক্কাও। অনেকেরই পরিবারে এখন আয় নেই। কারও থাকার জায়গাও আমফানে লণ্ডভণ্ড। সব মিলিয়ে ভালো নেই বাংলার গরীব ঘরের সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়রা। অনেকেরই প্রতিদিন জুটছে না পেট ভরে খাবারও।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার চম্পাহাটি। একসময় ওখান থেকে উঠে এসেছেন অনেক সাঁতারু। চম্পাহাটির খ্রিস্টান পাড়ার স্বদেশ মণ্ডল এখন বাংলার সাঁতারের ঊজ্জ্বল নাম। ওর স্বপ্ন দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পদক জেতা। পাশাপাশি ওকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছে ভারতের সাঁতার জগৎও। কিন্তু করোনার জন্য মাসের পর মাস লকডাউনের ফলে অনুশীলন বন্ধ। পরিবারে দেখা দিয়েছে আর্থিক সমস্যাও।
এবছরই জানুয়ারি মাসে আসামে ‘খেলো ইন্ডিয়া’-য় অনূর্ধ্ব ১৭ বিভাগে পাঁচটি সোনা জিতেছে স্বদেশ। ব্রেস্ট স্ট্রোকে তিনটি সোনা (৫০, ১০০ ও ২০০ মিটার)। বাকি দু’টি সোনা ব্যক্তিগত মেডলির (৪x৫০ ও ৪x১০০ মিটার)। গত বছর (২০১৯) গুজরাটে বয়সভিত্তিক জাতীয় প্রতিযোগিতায় অনূর্ধ্ব ১৭ বিভাগে জিতেছে ৪ টি সোনা ও একটি রুপো। গত সেপ্টেম্বরে এশিয়ান বয়সভিত্তিক সাঁতারে ওর গলায় উঠেছিল ২০০ মিটার ব্রেস্ট স্ট্রোকের রুপোর পদক। জাতীয় পর্যায়ে এর আগেও বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য সাফল্য রয়েছে স্বদেশের। তার ভিত্তিতেই গ্লেনমার্ক-সাই অ্যাকাডেমির শিক্ষার্থী হিসেবে থাকে দিল্লিতে। ওখানে প্রশিক্ষণ নেয় পার্থপ্রতিম মজুমদারের কাছে। করোনা-আতঙ্কে লকডাউন শুরু হওয়ার আগেই শিক্ষার্থীদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মার্চ মাসের ১৬ তারিখে দিল্লি থেকে চম্পাহাটির বাড়িতে ফিরে আসে স্বদেশ। তবে নিজেদের বাড়িতে নয়, আছে তালদির নস্করপাড়ায় মামার বাড়িতে।
সেই থেকে সাঁতার বন্ধ স্বদেশের। গ্রামে অনেক পুকুর থাকলেও তাতে নামছে না। স্বদেশ বলল, ‘পুকুরের জলে সাঁতার কেটে স্ট্রোক ধরা যায় না। এখন পুকুরের জলে অনুশীলন করলে লাভের চেয়ে ক্ষতি হবে বেশি। তাই সাঁতার থেকে দূরেই থাকতে হচ্ছে। তবে ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ করছি নিয়মিত। সকাল সাড়ে ছটায় স্যার ভিডিও কল করছেন। স্যারের নির্দেশ মতো শরীরচর্চা চলছে।’
আরও অনেকের মতো স্বদেশদের পরিবারেও আর্থিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। ওর বাবা রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল এক কোম্পানির অর্ডার নিয়ে বাড়িতে ছাতা তৈরি করেন। লকডাউন শুরুর পর থেকে সেই কাজ কয়েকমাস বন্ধ ছিল। তখন থেকেই আর্থিক টানাটানি। এখন কিছুটা কাজ শুরু হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ বলছিলেন, ‘বেশ খারাপ অবস্থাতেই আছি।’
মন ভালো নেই স্বদেশেরও। বলল, ‘বিশাল ক্ষতি হয়ে গেল। যতই বাড়িতে ফিজিক্যাল ট্রেনিং করি, সাঁতার কাটতে না পারলে চলবে কী করে! মার্চের লাস্ট উইকে আমাদের দুবাইয়ে একটা কম্পিটিশনে যাওয়ার কথা ছিল। তার আগেই বাড়ি চলে আসতে হয়। সফর বাতিল হয়ে যায়। যখন বাড়ি এলাম, ভাবতে পারিনি এতদিন আটকে থাকতে হবে। এখন তো বুঝতেই পারছি না, কবে আবার অ্যাকাডেমিতে যেতে পারব? কবে আবার জলে নামব? কবে আবার কম্পিটিশনে অংশ নেব?’