চীন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর দেখানো পথ ধরেই হেটে চলতে চাইছে নরেন্দ্র মোদির সরকার?

0
18

দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: পররাষ্ট্র নীতি তৈরি হয়ে থাকে রাষ্ট্র ব্যাবস্থা বুনিয়াদি ভিতের ওপরে। সময়ের বদলের সঙ্গে পররাষ্ট্র নীতিতে বদল ঘটলে মূল ভিত অপরিবর্তিত থেকেই যায়। সাম্প্রতিক লাদাখের গালোয়ান উপত্যকায় ভারত ও চীন সেনা বাহিনীর সংঘর্ষ প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র নীতি ঘিরে।

প্রশ্ন উঠছে বর্তমানে ভারতের পররাষ্ট্র নীতি কি দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর দেখানো পথ ধরেই হেটে চলতে চাইছে? বুঝতে হবে ভারত আর চীন দুই দেশ এশিয়া মহাদেশের দুই পারমাণবিক শক্তি, সঙ্গে পাকিস্তান। নিরস্ত্রীকরণ চুক্তিতে ভারত আর চীন দুই দেশের স্বাক্ষর রয়েছে। এই চুক্তি মানতে দায়বদ্ধ দুই দেশের জন প্রশাসন।  বিশেষত উপমহাদেশে ভারত অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামরিক শক্তির নিরিখে এগিয়ে। ভারতের আর এক প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ উপমহাদেশে ‘এক্স ফ্যাক্টর’ হিসেবে কাজ করে চলেছে। তাই চীনের নজর বাংলাদেশের বাজার অর্থনীতি সঙ্গে সমুদ্র বন্দর।

খুব সম্প্রতি ভারতীয় কোম্পানি চীনের সবথেকে বড় বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গাটছাড়া বেঁধেছে। আর এই গাঁটছাড়া হয়েছে গালোয়ান উপত্যকা উত্তপ্ত হওয়ার সময়েই। ঝাড়খন্ডে পাওয়ার স্টেশন করে পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে বিদ্যুৎ এর তার টেনে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবারহের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এরই সঙ্গে চীন, ভারত, বাংলাদেশ এবং মায়নমার নিয়ে রুট ম্যাপ তৈরি হয়েছে, যার পোশাকি নাম CIBM। পারস্পরিক সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করা, আন্তজার্তিক বাণিজ্য পথ গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়েই এই পরিকল্পনা।

এত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হওয়ার পরেও গালোয়ান উপত্যকায় ভারত চীন সীমান্ত বিবাদ। তার কারণ একটাই তিব্বত নিয়ে চীনের অবস্থান নিজেদের জমি। ভারত তিব্বত নিয়ে নিজের অবস্থানে অটল। একইভাবে শুধু গালোয়ান উপত্যকায় নয়, অরুণাচল প্রদেশ নিয়েও ভারত চীন দ্বৈরথ অব্যাহত। ১৯৬২ সালে চীনের আগ্রাসনের পর থেকেই ভারতের পররাষ্ট্র নীতি ঘিরে দেশের অভ্যন্তরে প্রশ্ন উঠেছে। এই বিতর্কের কোন শেষ নেই। কেননা ভারত সহ উপমহাদেশের রাষ্ট্র ব্যাবস্থা নানা সময়ে ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে গড়িয়েছে।  ভারত দেখেছে জরুরী অবস্থা, ভারত দেখেছে যুক্তফ্রন্ট সরকার। কংগ্রেস সমর্থিত কেন্দ্র সরকার। আবার UPA 1,2  সরকার। আর এখন দেখছে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বতে NDA সরকার, যা বিজেপি সরকার নামেই জন পরিচিত। আর চীনে রয়েছে শি ঝিনপিং এর নেতৃত্বতে কমিউনিস্ট  শাসন। একদলীয় শাসনের মোড়কে ‘সর্বাত্মক ক্ষমতা’ প্রয়োগের চরম, চূড়ান্ত ক্ষমতা প্রদর্শন। ক্ষমতার নগ্ন নাচ গোটা দুনিয়া দেখেছে তিয়েনমিন স্কোয়ারে। সংসদীয় গণতন্ত্রের বেড়াজালে ভারত। নির্বাচিত সরকারকে সংসদে দাঁড়িয়ে জবাবদিহির মুখে পড়তে হবে।  UPA প্রথম পর্যায়ে আমেরিকার সঙ্গে ভারতের অসমারিক পরমাণু চুক্তি ঘিরে UPA সহযোগী বামেদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এর দড়ি টানাটানি ভারত ভুলে যায়নি। মনমোহন সিং এর সরকারের চরম অস্বস্তির মাঝে তৎকালীন সিপিআই (এম) সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটের ঐতিহাসিক বক্তব্য ‘সরকারের সঙ্গে মধুচন্দ্রিমা শেষ’ মনমোহন সরকারকে অসামরিক পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরের পথে অক্সিজেন জুগিয়েছিল বৈকি।

বর্তমানে ভারত চীন সীমান্ত বিবাদ নরেন্দ্র মোদি সরকারের সফলতা অথবা  চীন নিয়ে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গিগত অবস্থান দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর পথে হেটে চলেছে কিনা এই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। কিন্তু বাজার অর্থনীতির, মুক্ত বাজার নীতি, বিশ্বায়নের জোয়ারে ভারত গ্যাট চুক্তি আর ডাঙ্কেল প্রস্তাবে  গা ভাসিয়ে দিয়েছে। ঠিক তেমনিভাবেই চীন বিশ্বায়ন, উদার অর্থনীতি, অবাধ বাণিজ্য সম্প্রসারণের গুরুত্বকে অস্বীকার না করেই সংশোধনের পথে হেটেই  দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ার বাজার অর্থনীতি দখলের পথে এগিয়ে গিয়েছে। সাম্প্রতিক ভারত চীন সীমান্ত বিবাদের মাঝেও দুই দেশ বাণিজ্যিক আদান প্রদানের রাস্তা খুলে রেখেই নিজেদের পররাষ্ট্র নীতিকে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here