সন্তু ধর
আমাদের মধ্যে কেউ চিংড়িকে ভয় করেন কেউ ইলিশকে কেউ ভয় পান ধূলো আবার কেউ বিড়াল। কিন্তু এই ভয়ের পেছনে আসল কারণ অ্যালার্জি। হ্যাঁ, কেন হয় এই অ্যালার্জি? কী কারণ তার পেছনে? আজ জেনে নেব একে একে।
চিংড়ি আপনার ভীষণ পছন্দের তবুও তিনি খাওয়া ছেড়েছেন ছোটবেলায়। কারণ শ্বাসকষ্ট। আবার বেগুন খেলেই আমার ঠোঁটে , গায়ে চুলাকানি শুরু হয়ে যায়, আসলে “বেগুনে আমার অ্যালার্জি আর আপনার চিংড়িতে ।” এই অ্যালার্জি নিয়ে চিন্তার শেষ নেই।
আজ এই প্রতিবেদনে আমাদের ত্বকের ৪ ধরনের অ্যালার্জি নিয়ে আলোচনা করব যা খুবই সাধরণ এবং প্রায় মানুষ ই ফেস করে থাকেন। অ্যালার্জির রকমফের নিয়ে জানতে হলে আগে জেনে নিতে হবে এই অ্যালার্জি কী? কত ধরনেরই বা অ্যালার্জি আছে? আর এই অ্যালার্জি থেকে পরিত্রাণ পাবার উপায়টাই বা কী? আসুন তাহলে জেনে নেয়া যাক অ্যালার্জির আদ্যোপান্ত বা এক কথায় সাত কাহন!
অ্যালার্জি এক কথায় আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সমস্যার একটি বহিঃপ্রকাশ। এর বহিঃপ্রকাশ ঘটে কারো হাঁচির মাধ্যমে, চোখের অ্যালার্জি, কারো চুলকানি, কারও বা শ্বাসকষ্ট ও র্যাশ বা চাকা হয়ে ফুলে ওঠার মাধ্যমে।
এই প্রসঙ্গে জেনে রাখা ভাল যে যেসব বস্তুর কারণে আমাদের আলার্জি হয়, তাদের অ্যালার্জেন বলে। এর অর্থ অ্যালার্জি কোনো একটি রোগ নয়। এটি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার বিরূপ অবস্থার একটি লক্ষণ মাত্র।
আমাদের চেনা অনেক ধরনের অ্যালার্জিগুলি আসলে 4টি শ্রেণীতে অন্তর্ভূক্ত। যার প্রধান 4টি শ্রেণী হলো-
১) সংস্পর্শ
২) আহার
৩) ইনজেকশন
৪) প্রশ্বাস জনিত
আজ আমাদের প্রতিপাদ্য বিষয়, ত্বকের অ্যালার্জি যা সংস্পর্শ বিভাগে রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গাছপালা, ধুলোবালি এমন কী পশুপাখিও !
ত্বকের কিছু অ্যালার্জি
ল্যাটেক্স অ্যালার্জি (Latex allergy)
বেলুন, রাবার ব্যান্ড, রাবার বল, গ্লাভস, কনডম ইত্যাদি। অর্থাৎ, প্রাকৃতিক রাবার জাতীয় প্রোডাক্ট-কেই ল্যাটেক্স বলে। মূলত: 3 ধরনের ল্যাটেক্স অ্যালার্জি দেখতে পাওয়া যায়- টাইপ-১, টাইপ-৪, ইরিট্যান্ট কনটাক্ট ডার্মাটিটিস।
এই ৩ ধরনের ল্যাটেক্স অ্যালার্জি-তেই সাধারণ লক্ষণ হলো ল্যাটেক্স-এর স্পর্শ পাওয়া জায়গায় চুলকানি হওয়া ও ফুলে যাওয়া। আর খুব বেশী মারাত্নক পর্যায়ের অ্যালার্জি হলে নাক দিয়ে জল পড়া, চোখ জ্বালা করা ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
এই অ্যালার্জি মাত্র ১% মানুষের থাকে। যাদের এই অ্যালার্জির সমস্যা আছে, তারা ল্যাটেক্স জাতীয় প্রোডাক্ট এড়িয়ে চলবেন। আর এড়িয়ে চলা সম্ভব না হলে নন-ল্যাটেক্স জাতীয় প্রোডাক্ট ব্যবহার করবেন।
বিষাক্ত গাছ (Poison Plant)
পয়জন আইভি নামক গাছের সংস্পর্শে আসলেই অ্যালার্জির সমস্যা হচ্ছে। তবে সবার যে হচ্ছে তা নয়, যাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেমেই পয়জন আইভি গাছকে ক্ষতিকারক মনে করে অ্যান্টিবডি তৈরি করে নিচ্ছে ,শুধুমাত্র তাদের বেলাতেই গা চুলকানো ও জ্বালা করার সমস্যা দেখা যায়। এমন কী এদের ওক (Oak) এবং সুমাক (Sumac) গাছের সংস্পর্শে আসলেও অ্যালার্জি হতে পারে।
এই অ্যালার্জি হলে চুলকানো বা জ্বালাভাব ২-৩ দিন থেকে ২-৩ সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে।
এই অ্যালার্জি থেকে প্রতিকার পেতে ক্যালামাইন লোশন ব্যবহার করতে পারেন। ১৫-২০ মিনিট পরপর ঠাণ্ডা জলেতে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে অ্যালার্জি হওয়া জায়গায় আলতো করে মুছে নিন। এসময় মাঝে মাঝে লিটল হট বাথ নিতে পারেন। এতে আরাম পাবেন।
পোষ্য অ্যালার্জি (Pet allergy)
কমবেশি অনেকেরই পোষ্য কুকুর বা বিড়াল থাকে। এই পোষ্য কুকুর-বিড়ালের লোম থেকে হতে পারে শ্বাসকষ্ট। যদিও কুকুর-বিড়ালের লোম কোনো অ্যালার্জেন নয়, তবে পোষ্যের লোমে বিভিন্ন অ্যালার্জেন থাকে যেমন- ধূলাবালি, পোষ্যের মলমূত্র, লালা ও পোষ্যের মৃতকোষ। পোষ্য না হলেও রাস্তায় থাকা মৃত পশুপাখির কাছাকাছি গেলেও অ্যালার্জি হতে পারে।
এই ধরনের অ্যালার্জি হলে হাঁচি ও শ্বাসকষ্ট হতে দেখা যায়। আপনার প্রিয় পোষ্যকে সবসময় পরিষ্কার স্থানে রাখুন ও নিয়মিত স্নান করান।
এছাড়াও অনেক অজানা কারণেও অ্যালার্জি হতে পারে। তবে মাথায় রাখেব্ন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ভিন্ন ওষুধ কিনে খাওয়া যাবে না। শুধু মাত্র পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াহীন ঘরোয়া রেমিডি ব্যবহার করতে পারেন।